ডিএনবি নিউজ ডেস্ক:
আজ রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে যথাযোগ্য মর্যাদায় সারাদেশে ‘পবিত্র শবে বরাত’ পালিত হবে। এ উপলক্ষ্যে পরদিন সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সরকারি ছুটি থাকবে।
ফারসি ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত আর ‘বরাত’ অর্থ মুক্তি। আজ সেই মুক্তির রাত বা ‘লাইলাতুল বরাত’।
হিজরি সনের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে সৌভাগ্যের রাত হিসেবে পরিচিত। এই রাতে বান্দাদের জন্য অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন মহান আল্লাহ তাআলা।
মহিমান্বিত এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময় মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় নফল নামাজ, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও জিকিরে মগ্ন থাকেন। অতীতের পাপ ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করেন।
সন্ধ্যার পর অনেকে কবরস্থানে যান এবং আপনজনদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন।
রমজান যথার্থভাবে পালনের জন্য দুই মাস আগে থেকেই এর প্রস্তুতি শুরু হয়। রজব ও শাবান এই দুই মাস রমজানের প্রস্তুতির মাস। মহানবী (সা.)-এর জীবদ্দশায় রমজান যতই ঘনিয়ে আসত, তা নিয়ে আলোচনা ও আমলের মাত্রা ততই বেড়ে যেত এবং তিনি সাহাবিদের রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিতেন। শবে বরাত, অর্থাৎ মধ্য শাবান থেকে সাহাবিদের কাজকর্ম ও আমলে রমজানের পূর্ণ আমেজ এসে যেত। কাজেই শবে বরাত রমজানের আগমনী বার্তা হিসেবে আগমন করে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন অর্ধ শাবানের রাত তোমাদের সামনে আসে, তখন তোমরা নামাজ আদায় করো এবং পরের দিনে রোজা রাখো। আল্লাহ তাআলা এ রাতে সূর্যাস্তের পর প্রথম আসমানে অবতরণ করেন। এরপর তিনি এই বলে ডাকতে থাকেন—তোমাদের মধ্যে আছে কি কোনো ক্ষমাপ্রার্থনাকারী? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। তোমাদের মধ্যে আছে কি কোনো রিজিক অন্বেষণকারী? আমি তাকে রিজিক দান করব। তোমাদের মধ্যে আছে কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি তার বিপদ দূর করে দেব। ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলতে থাকে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৮৮)
মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৫৬৬৫; আল-মুজামুল আওসাত, হাদিস: ৬৭৭৬; শুআবুল ইমান, হাদিস: ৩৮৩৩; মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস: ১৩০৬)
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে আজ রোববার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ওয়াজ, দোয়া মাহফিল, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, হামদ-নাতসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
পবিত্র শবে বরাত মুসলমানদের কাছে পবিত্র রমজানের আগমনী বার্তাও নিয়ে আসে। শাবান মাসের পরে আসে পবিত্র রমজান মাস। তাই শবে বরাত থেকেই কার্যত রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়।
এদিকে, পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁর বাণীতে বলেছেন, ‘আর কিছুদিন পরেই আসছে পবিত্র রমজান মাস। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের জন্য দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি। এ পরিপ্রেক্ষিতে সমাজের অসহায়, দরিদ্র ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতে আমি বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে পবিত্র শবে বরাতের মাহাত্ম্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবকল্যাণ ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আসুন, সকল প্রকার অন্যায়, অনাচার, হানাহানি ও কুসংস্কার পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে প্রতিষ্ঠা করি।’