আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি জানাল হেফাজত

ডেস্ক রিপোর্ট:

সারা দেশের মাদ্রাসায় ‘হামলা ও জুলুম’ হচ্ছে দাবি করে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী সরকারের কাছে অবিলম্বে হামলা বন্ধ, আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় হেফাজত কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য থাকবে বলে তিনি সতর্ক করে দেন।

আজ রোববার বেলা তিনটায় হাটহাজারী সদরের কাচারি সড়কে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে বাবুনগরী অভিযোগ করেন ‘গত শুক্রবার মাদ্রাসাছাত্রদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে প্রশাসন, পুলিশ বাহিনী গুলি করে হাটহাজারীর চারজনকে শহীদ করেছে। আহত হয়েছেন অনেক। সারা দেশে নিহত হয়েছেন এ পর্যন্ত ১৬ জন। এটা মামুলি কথা নয়। এ জন্য হরতালের ডাক দিয়েছি।’ উল্লেখ্য, মোদিবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলি ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীর হামলায় নিহত নেতাকর্মীর হত্যার প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামী আজ সকাল-সন্ধ্যা হরতালের আহ্বান করে। আজকের হরতাল পালনকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, নারায়নগঞ্জ ও রাজধানীতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

আওয়ামী লীগের প্রতিরোধ

এদিকে, বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতাল প্রতিহত করতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেয়  আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে হরতালের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে সকাল থেকে মালিবাগ এলাকা, রেলক্রসিং ও রামপুরা সড়কে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা। তাদের কারও কারও হাতে লাঠি, হকিস্টিকও দেখা গেছে।

পল্টনে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর পল্টনে হেফাজতে ইসলাম ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয়পক্ষকেই ইট-পাটকেল ছুড়তে দেখা যায়। তবে পুলিশের কঠোর অবস্থানের মধ্যে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

মুন্সীগঞ্জে পুলিশ-হেফাজত সংঘর্ষ, ওসিসহ আহত ২০

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলায় হেফাজতে ইসলাম ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। আজ রোববার বেলা ১২টার দিকে উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের বড় শিকারপুর এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষে সিরাজদীখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম জালাল উদ্দিন, উপপরিদর্শক (এসআই) সেকেন্দার আলী, হেফাজতের ইসলামের নায়েবে আমির ও মধুপুর পীর আল্লামা আব্দুল হামিদ ও হাফেজ মাওলানা বশির আহম্মেদসহ যুবলীগের নেতাকর্মীরা আহত হন।

উপজেলার বড় বড়শিকারপুর এলাকায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। ইটপাটকেল ছুড়ে আহত করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে এবং ফাকা গুলি ছোড়ে। এছাড়া সংঘর্ষচলাকালীন সময়ে বেশকয়েকটি দোকানপাট ভাঙচুর, তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং একটি অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক সহিংসতা

হেফাজতে ইসলামের হরতালের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে চলাচল করা ‘সোনার বাংলা এক্সপ্রেস’ ট্রেনে ভাঙ্চুর চালিয়েছে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মী ও হরতাল সমর্থকরা। আজ সকাল ৯টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এ ঘটনা ঘটে। পরে নিরাপত্তাজনিত কারণে সাময়িক সময়ের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওপর দিয়ে সিলেট ও চট্টগ্রামে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।

আজ রোববার বেলা ১১টার পর থেকে জেলা সদর, আশুগঞ্জ, সরাইলের একাধিক স্থানে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুর হয়েছে ব্যাপক। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, হামলাকারীদের মূল লক্ষ্য ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি সম্পদ। লক্ষ্য বানানো হয়েছে সাংবাদিকদেরও। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা মসজিদ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন এবং কোথাও হামলা না করার আহ্বান জানানো হয়েছিল।

কিন্তু বেলা ১১টার পর জেলা পরিষদ ভবনে আগুন দেওয়া হয়। নিচতলার অনেক কক্ষে আগুন দেওয়ার পর এসির বিস্ফোরণ হয়। সুরসম্রাট আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গন, পৌরসভায় ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। আগুন দেওয়া হয় সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে। হামলা হয়েছে সদর থানায়, প্রেসক্লাবে।

শহীদ ধীরন্দ্র নাথ দত্ত ভাষা চত্বরে গতকাল শনিবার থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উন্নয়ন মেলা চলছে। সেই মেলাতেও আগুন দেওয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবেও হামলা হয়েছে, কাচ ভেঙে ফেলা হয়েছে। প্রেসক্লাবের সভাপতি দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার রিয়াজউদ্দিন জামি প্রেসক্লাবে ঢোকার সময় তাঁর ওপর হামলা করা হয়। তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছেন। ছয়টি সেলাই লেগেছে। আশুগঞ্জ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতুর টোল প্লাজায় থাকা পুলিশ ফাঁড়িতে আক্রমণ করে হরতাল–সমর্থনকারীরা। এ সময় পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। টোল আদায়ের বুথ ভাঙচুর করা হয়। সরাইলের বিশ্বরোড এলাকায় পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনগুলোর একটি সোনার বাংলা এক্সপ্রেস। ট্রেনটি ঢাকা থেকে কোনো বিরতি ছাড়াই সরাসরি চট্টগ্রামে যায়। সকালে ট্রেনটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের পৌঁছালে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। এতে ট্রেনের ইঞ্জিন ও কোচের ১২৪টি কাচ ভাঙচুর করা হয়েছে। পরে ট্রেনটি ফিরিয়ে ভৈরবে নিয়ে আসা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ এবং হরতালের প্রতিবাদে দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।

সিলেটে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

সিলেটে হেফাজতে ইসলামের হরতাল চলাকালে দুপুরে নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে বিজিবি ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা বন্দরবাজার এলাকায় অবস্থান করা হরতাল সমর্থকদের ধাওয়া করে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। পরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হরতাল সমর্থকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ ঘটনার পর নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সিদ্ধিরগঞ্জে সংঘর্ষ  

আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে জেলা পুলিশ সুপারসহ আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। এছাড়া এক তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে বেলা ১১টার দিকে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় হেফাজত ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার একপর্যায়ে মাদ্রসাছাত্রদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।

র‌্যাব ও পুলিশকে পানি ও হাল্কা খাবার খাওয়ালো হেফাজত

রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় হেফাজতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাদানী নগর মাদরাসার সামনে রাস্তায় হরতাল প্রতিরোধের দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পানি ও হাল্কা খাবার সরবরাহ করেছে হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা । সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে চিটাগাংরোড পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে হেফাজত কর্মীরা।

রাজশাহীতে বাসে আগুন

রবিবার সকালে রাজশাহী নগরীর ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় দুটি বিআরটিসি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে ৬টায় দিকে টার্মিনালের ভেতর পার্কিংয়ে রাখা দুটি বাসের মধ্যে একটিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে একটি বাস পুরোটাই পুড়ে গিয়ে অন্যটিতেও আগুন ধরে আংশিক পুড়ে গেছে। পুলিশের ধারণা হরতালের নামে নাশকতা সৃষ্টি করতেই এই আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় শাহ মখদুম থানায় মামলা দায়েরের হয়েছে।

নগরীর শাহমখদুম থানার ওসি সাইফুল ইসলাম খান বলেন, হরতালের নামে নাশকতা সৃষ্টি করতেই এই আগুন দেওয়া হয়েছে কিনা তা আমরা নিশ্চিত নই। কারণ বাস দুটি ট্রাক টার্মিনালের ভেতর ৯ মাস ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল।

এদিকে রাজশাহীতে হরতালের সমর্থনে কোথাও হেফাজতে ইসলামের কোনো মিছিল বা প্রকাশ্যে পিকেটিং লক্ষ্য করা যায়নি। হরতালেও স্বাভাবিক ছিল গাড়ি চলাচল।#

Print

সম্পর্কিত পোস্ট

''আপনার মতামত দিন''

ডিএনবি নিউজ ২৪.কম