মাগফিরাত বার্তা নিয়ে আসছে রমজানের দ্বিতীয় দশক

মাওলানা আব্দুর রহমান আশরাফি

প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সা. বলেছেন, রমজান মাসের প্রথম দশক হলো রহমত; তার দ্বিতীয় দশক হলো মাগফিরাত; এর শেষ দশক হলো নাজাত। (বায়হাকি শরিফ)। রমজান হলো প্রশিক্ষণের মাস। আল্লাহ চান তাঁর বান্দা তাঁর গুণাবলি অর্জন করে সে গুণে গুণান্বিত হোক।

হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, তোমরা আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হও। আল্লাহর রং বা গুণ কী? তা হলো আল্লাহ তাআলার গুণাবলি। এর মধ্যে আল্লাহ তাআলার নিরানব্বইটি গুণবাচক নাম অন্যতম। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সা. আরও বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার নিরানব্বইটি নাম রয়েছে, যারা এগুলো আত্মস্থ করবে; তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। (মুসলিম ও তিরমিজি)।

মহান আল্লাহর নামাবলি আত্মস্থ করার বা ধারণ করার ও গ্রহণ করার অর্থ হলো সেগুলোর ভাব ও গুণ অর্জন করে তার প্রতিফলন ঘটানো তথা সেসব গুণ ও বৈশিষ্ট্য নিজের কাজকর্মে, আচার-আচরণে প্রকাশ করা অর্থাৎ নিজেকে সেসব গুণের আধারে পরিণত করা বা সেসব গুণের অধিকারী হিসেবে গড়ে তোলা।

মাগফিরাতের মূল শিক্ষা হলো, আমি আল্লাহর ক্ষমা পাব এবং সবাইকে ক্ষমা করে দেব। হাদিস শরিফে রয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ গোপন করবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।’ (তিরমিজি শরিফ)। ক্ষমা করে দিলে নিজের মনের বোঝা দূর হয়, মানসিক চাপ কমে যায়, মন হালকা ও পবিত্র হয়। সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর দয়া, করুণা ও ক্ষমা লাভ করা যায়।

হাদিসের উক্তি অনুযায়ী ‘দুর্ভাগা তারা, যারা রমজান পেয়েও মাগফিরাত বা ক্ষমা লাভ করতে পারল না।’ (বুখারি শরিফ)। মহান আল্লাহ তাআলার একটি গুণ হচ্ছে ক্ষমা করা। পবিত্র কোরআনে ক্ষমার ব্যাপারে তিনটি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যথা: ‘গাফফার’। এ শব্দটির অর্থ হচ্ছে অত্যন্ত ক্ষমাশীল। পবিত্র কোরআনে এ শব্দটি পাঁচবার উল্লেখ হয়েছে। ‘গাফুর’, যার অর্থ হচ্ছে পরম ক্ষমাশীল। এ শব্দটি পবিত্র কোরআনে একানব্বই বার উল্লেখ হয়েছে। ‘গাফির’ যার অর্থ হচ্ছে ক্ষমাকারী। যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তিনি গুনাহ ক্ষমাকারী’। (সুরা ৪০ মোমিন, আয়াত: ৩)।

আরও উল্লেখ রয়েছে, ‘জেনে রেখো, তিনি পরাক্রমশালী পরম ক্ষমাশীল’। (সুরা ৩৯ জুমার, আয়াত: ৫)। বিশেষভাবে উল্লেখ হয়েছে, ‘হে নবী (সা.) আপনি আমার বান্দাদের বলে দিন, আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সুরা-১৫ হিজর, আয়াত: ৪৯)। হাদিসে কুদসিতে বলা হয়েছে, বান্দা যদি দৈনিক সত্তরবার অপরাধ করে এবং সত্তরবার ক্ষমা চায় আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। তাই নবী করিম (সা.) দৈনিক ৭০ বারের বেশি বা ১০০ বার ইস্তিগফার করতেন। অথচ তিনিসহ সব নবী-রাসুল ছিলেন নিষ্পাপ।

হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে, শেষ রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাদের ডেকে বলতে থাকেন: কে আছো ক্ষমা চাওয়ার? ক্ষমা চাও, আমি মাফ করে দেব। (মুসলিম শরিফ)। উম্মুল মোমেনিন হজরত আয়িশা সিদ্দীকা রা. রাসুলে আকরাম সা. কে প্রশ্ন করেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আমি যদি শবে কদর পাই তাহলে আমি ওই রাতে কী দোয়া পড়ব? উত্তরে রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, হে আয়িশা! তুমি এই দোয়াটি পড়বে। ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।’ হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করাকে পছন্দ করেন; অতএব আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন।

হজরত সাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন, কেউ যদি সকাল-সন্ধ্যায় বিশ্বাসের সঙ্গে সাইয়েদুল ইস্তিগফার পড়ে তাহলে সে যদি ওই দিন রাতে বা দিবসে ইন্তেকাল করে তাহলে সে জান্নাতি হবে। হাদিস শরিফে আরও বলা হয়েছে যে, যদি কেউ গুনাহ মাফের উদ্দেশ্যে ইস্তিগফার করাকে নিজের ওপর লাজিম তথা আবশ্যক করে নেয়, তাহলে আল্লাহ পাক তাকে ৩টি পুরস্কার দেবেন। ১. তার জীবনের কঠিন অবস্থা থেকে তাকে উদ্ধার করবেন। ২. তাকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন। ৩. তাকে তার অচিন্তনীয় ও কল্পনাতীত স্থান থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।

আল্লাহ তাআলা তার বান্দা-বান্দিদের প্রতি বিভিন্ন সময়ে তার গাফফার এবং গফুর নামের বদৌলতে ক্ষমার কুদরতি হাত প্রসারিত করেন। বেশি করে পবিত্র মাহে রমজানের মধ্যের দশকে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষমা করে দেন। কারণ, এ মাসটি হচ্ছে রহমতের মাস, কোরআন নাজিলের মাস, ক্ষমার মাস, শবে কদরের রজনীর ফজিলত অর্জনের মাস।

রমজান ইবাদতের মাস। রমজান রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। এ মাসের একটি নফল ইবাদত একটি ফরজের সমান সওয়াব। একটি ফরজ সত্তরটি ফরজের সমান; প্রতিটি ইবাদতের সওয়াব সত্তর গুণ বেশি। এ মাসে গুনাহ করাও কঠিন অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। তাই সামর্থ্যমতো বেশি বেশি নেক আমল করার পাশাপাশি সকল প্রকার বদ আমল বা গুনাহ বর্জন করতে হবে।

লেখক: তরুণ আলেম, সাংবাদিক

Print

সম্পর্কিত পোস্ট

''আপনার মতামত দিন''

ডিএনবি নিউজ ২৪.কম