ডিএনবি নিউজ ডেস্ক:
দুর্গাপুরে বাঙালি, গারো আদিবাসী অধ্যুষিত এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষই কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। প্রায় আড়াই লাখ জনগোষ্ঠীর এই উপজেলায় খাদ্য চাহিদা বেশিরভাগই উৎপাদিত হয় স্থানীয় ভাবেই। এ ছাড়া উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এখানকার কৃষকরা।
বছরে রুপা আমন ও বোরো মৌসুমের ধানের চাষাবাদ করেই সারাবছর চলেন কৃষকেরা। তবে এ বছর আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ গরম হাওয়া ও ব্লাস্ট ভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক কৃষকের জমির ধান। কোথাও কোথাও অর্ধেকেরও বেশি ধান নষ্ট হয়েছে। উপজেলা চন্ডিগড়, বিরিশিরি, কাকৈরগড়া, বাকলজোড়া, গাঁওকান্দিয়া, কুল্লাগড়া, সদর ইউনিয়ন সহ উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে একই অবস্থা।
ক্ষতিগ্রস্ত জমি গুলোতে অর্ধেকেরও বেশি ধান নষ্ট হয় ধান পেকে থাকলেও শ্রমিকের টাকায় চিন্তাই অনেক কৃষকই পারছেন না ধান। অনেক কৃষকই আবার নিজের জমির ধান নিজে কোনরকমে কাটছে। তবে বাজারে ন্যায্যমূল্য পেলে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে করছেন তারা। এবছর দুর্গাপুর উপজেলায় ১৭ হাজার ৬ শত হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মাঝে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও বাকি ১০ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের ধানের আবাদ করেছেন কৃষকরা। কৃষি কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাই ৯৮০ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এর মাঝে ৪২০ হেক্টর জমির ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। টাকার হিসাবে যা দাঁড়ায় ৬ কোটি টাকা বেশি। তাছাড়া ধানের হিসেবে ২ হাজার ৬৪৬ মেট্রিক টন ধান আবাদ হবে। কৃষকরা বলছে এই ক্ষতির পরিমাণ আরো প্রায় ২ হাজার হেক্টর চেয়েও বেশি। ধানের বিভিন্ন জাতের মাঝে এবারে দুর্যোগের ব্রি ধান ২৮ ও ব্রি ধান ২৬ এর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব জাতের জমিগুলোতে গরম হওয়ার প্রভাব ও ব্লাস্টের প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। ৫ কাঠা জমি থেকে আগে যেখানে ২০ থেকে ২৫ মণ ধান অবাক হতো এখন থেকে কৃষকরা পাচ্ছেন ১০ থেকে ৮ মণ ধান। সরকারিভাবে পুরো উপজেলায় ধান কাটার জন্য দুটি হারভেস্টার মেশিন দেয়া হলো তাও পর্যাপ্ত নয় বলে বলছেন কৃষকরা। সমতলের কৃষি ভূমির ধান কাটার জন্য হারভেস্টার মেশিন বেশ কার্যকরী তাই সরকারিভাবে হাইকমিশনের সংখ্যায় উপজেলায় আরো বাড়ানোর দাবি কৃষকদের।
এদিকে গত বছর করোনাকালীন সময়ে বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অসহায় ও দরিদ্র কৃষকদের ধানক্ষেতে বাড়ি পৌঁছে দাও এ বছর চিত্রটা পুরোপুরি ভিন্ন। হাতে গোনা দুই একটি সংগঠন ছাড়া কাউকেই স্বেচ্ছাশ্রমে ধান কাটতে দেখা যাচ্ছে না।
চন্ডিগড় গ্রামের কৃষক মেরাজ জানান, ৫ কাঠা জমিতে বি ২৮ জাতের ধানের আবাদ করছি। যে জমিতে আগে ২০ থেকে ২৫ মণ ধান পাইতাম এখন ঐ জমি থেকে মাত্র ৭/৮ মণ ধান পাইছি। এখন আমরা বাজারে বিক্রি করবো কি আর নিজেদের খাবার জন্য রাখবো কি। তাছাড়া বাজারে যদি ধানের ন্যায্যদাম পাই তাহলে হয়তো ক্ষতি কিছুটা পূরণ হবে।
কুল্লাগড়া গ্রামের কৃষক আবদুল মোতালেব জানান, আড়াই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ২০ কাঠা জমির ধান করছি। কিন্তু গরম হাওয়া আর ব্লাস্ট এর কারণে সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। জমিতে ধান থাকলেও কাটল কোন লাভ নাই কারণ ধানের মাঝে কোন চাল নাই সব নষ্ট হয়ে গেছে। কিভাবে এই ঋণ পরিশোধ করুম এই চিন্তায় ঘুম আসেনা।
এদিকে নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে প্রেরণ করেছি। এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের একটি তালিকা তৈরির কাজ চলছে। সরকারি সহায়তা পেলেই কৃষকদের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া হবে।