দুর্গাপুরে পানি সংকট অতি চরমে

নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলা পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। গ্রীষ্মের শুরুতে দেখা দিয়েছে পানির তীব্র সংকট। চতুর্দিকে সুপেয় পানির হাহাকার থাকায় নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে এলাকায়। সমস্যা সমাধানের জন্য জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট মহলের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী। গোপালপুর, ভবানীপুর, গুজিরকোনা ঐসব এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ টিউবয়েলে রয়েছে আর্সেনিক। নদী-খাল, পুকুরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বোরো চাষে ঘটছে বিপর্যয়।

এ নিয়ে শনিবার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাম গুলো ঘুরে জানা গেছে, প্রতি বছর এই মৌসুমে পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানি ও ক্ষেতে চাষের পানির অভাব চরম আকার ধারণ করেছে। শত শত লোকজন নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। সুপেয় পানির এ সংকট যেন এলাকাবাসীর নিত্য দিনের সমস্যা। বোরো আবাদে পানি না পেয়ে সাধারণ কৃষকগন দিশেহারা হয়ে উঠেছে। এলাকায় ধনাঢ্য ব্যক্তিদের বাড়ীতে সাব-মার্সেবল থাকায়, সুপেয় পানির ব্যবস্থা থাকলেও সমস্যা থেকে যায় এলাকার নি¤œ আয়ের মানুষ গুলোর। গত কয়েক বছর ধরে দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকার আদিবাসী গ্রাম গুলোতে এ সমস্যা চলতে থাকলেও সরকারিভাবে এটি সমাধানের জন্য কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এলাকার বেশিরভাগ নদী-খাল ও পুকুর শুকিয়ে যাওয়ায় গোসল ও খাবার পানি মিলছে না কোথাও। ফলে লোকজনকে আর্সেনিকযুক্ত টিউবয়েলের পানি দিয়েই সাংসারিক সকল কাজ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া চন্ডিগড় উচ্চ বিদ্যালয়, মাকরাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বারমারি উচ্চ বিদ্যালয়, বিরিশিরি ইউনিয়ন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাব-মার্সেবল টিউবওয়েল না থাকায় শিক্ষার্থীদের বিপাকে পড়ে আর্সেসিকযুক্ত পানিই পান করতে হচ্ছে। এ ছাড়া এখানকার বাসাবাড়ি ও হোটেল-রেষ্টুরেন্টে সুপেয় পানির অভাবে বিভিন্ন পুকুরের পানি ব্যবহার করতেও শুনাগেছে। বিভিন্ন লোক ভ্যানযোগে দূর থেকে সাব-মার্সেবল টিউবওয়েল এর পানি তুলে বিভিন্ন হোটেল-রেঁস্তোরায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। পানির এ প্রকট সমস্যায় যেন দিশেহারা হয়ে উঠেছে লোকজন।

বানিয়াপাড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পল্টন হাজং জানান, তার বিদ্যালয়ে প্রায় ৪ শতাধিক ছাত্রী রয়েছে। তাদের জন্য সুপেয় কোন পানির ব্যবস্থা নেই। বাধ্য হয়ে দুষিত পানি পান করতে হয় আমাদের। এর ফলে নানা ধরণের পানিবাহিত রোগ-ব্যাধিতে ভুগতে হয় অনেককেরই।

চন্ডিগড় ইউপি চেয়ারম্যান আলতাবুর রহমান কাজল প্রতিবেদক কে জানান, বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। প্রকল্পটি পাশ হলে অনেক বাড়ীতে সাব-মার্সেবল টিউবওয়েল স্থাপন করা হবে, এতে সুপেয় পানির সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হবে।

বিশুদ্ধ পানি নিয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম জানান, এ সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। নতুন বরাদ্দ পেলেই পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাম গুলোতে সাব-মার্সেবল টিউবওয়েল স্থাপন করে পানির সমস্যা অকোংশে দুরকরা সম্ভব।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীব-উল-আহসান প্রতিবেদককে কে জানান, এলাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাবে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ ছড়ানোর আগেই জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর দপ্তরের মাধ্যমে প্রকল্প অনুযায়ী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সাব-মার্সেবল টিউবওয়েল স্থাপন করার জন্য অচিরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হাতে নেয়া হবে।

Print

সম্পর্কিত পোস্ট

''আপনার মতামত দিন''

ডিএনবি নিউজ ২৪.কম