রাজারবাগ দরবারের সব আস্তানা বন্ধের সুপারিশ বিবেচনায় নিতে হাইকোর্টের নির্দেশ

ডিএনবি নিউজ ডেস্ক:

দেশব্যাপী রাজারবাগ দরবারের সব আস্তানা বন্ধে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ বিবেচনায় নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ পুলিশের কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিট এবং ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টকে (সিআইডি) একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন আদালত।

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের স্বাক্ষরের পর প্রকাশিত আদেশে এসব নির্দেশনা তুলে ধরা হয়।

আজ মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) আদেশ প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন রিটকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

হাইকোর্টের লিখিত আদেশে কেন রিট আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা ও হয়রানিমূলক ফৌজদারি মামলা দায়েরে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান-পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া অত্র অদালতের বিবেচনায় যথাযথ প্রচারযোগ্য এতদ্সংশ্লিষ্ট অন্যবিধ আদেশ বা অধিকতর আদেশ বা আদেশসমূহ কেন প্রচারিত হবে না, তা জানতে রুল জারি করা হয়েছে।

আদেশে বলা হয়, ‘রুলটি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) এর অতিরিক্ত মহা-পুলিশ পরিদর্শককে দরখাস্তকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা দায়েরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণক্রমে এ আদেশ পাওয়ার ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।’

এতে বলা হয়, ‘রিট পিটিশনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের করণীয় নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির প্রতিবেদন হতে প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত কমিটি ৭টি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম: (ক) রাজারবাগের কথিত পীর দিল্লুর রহমান ও তার প্রতিষ্ঠানসমূহের নামে যে সব সম্পদ রয়েছে তার তালিকা প্রস্তুত করে আয়ের উৎস ও রাজস্ব প্রদানের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে; (খ) সাধারণ মানুষকে যেন ধর্মের নামে ধোঁকা দিতে না পারে এবং নিরীহ মানুষের অর্থ-সম্পদ যেন হয়রানিমূলকভাবে মিথ্যা মামলা করে হাতিয়ে নিতে না পারে সেজন্য রাজারবাগের কথিত পীর দিল্লুর রহমানের মূল আস্তানাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শাখা কার্যালয়সমূহ বন্ধ করে দিতে হবে। একইসঙ্গে তার বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক কালো তালিকাভুক্ত জঙ্গি সংঘঠন “উলামা আঞ্জুমান আল-বাইয়্যিনাত” এবং তার প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে প্রচারিত সংবাদপত্র “আলবাইয়্যিনাত ও আল ইহসান” নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।’

আদেশে বলা হয়, ‘এছাড়াও নথি থেকে প্রতিয়মান হয় যে, উক্ত কথিত পীর ও তার দরবার শরিফের নামে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৭ হাজার একর জমি, রাবার বাগান অবৈধ দখলে আছে।’

এতে আরও বলা হয়, ‘উপরোক্ত বিষয়সমূহ বিবেচনায় নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে রাজারবাগের কথিত পীর দিল্লুর রহমন ও তার প্রতিষ্ঠানসমূহের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সব সম্পদ রয়েছে তা নির্ণয়, ওই সব সম্পদের উৎস সম্পর্কে এবং বাংলাদেশ পুলিশের কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিটকে উক্ত পীর এবং তার পৃষ্ঠপোষকতায় ‘উলামা আঞ্জুমান বাইয়্যিনাত’ অথবা ভিন্ন কোনও নামে কোন জঙ্গি সংগঠন আছে কিনা, সে বিষয়ে হাইকোর্টে আগামী ৩০ নভেম্বরের আগে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।’

প্রসঙ্গত, গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর দিল্লুরসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ৮ জন ব্যক্তির পক্ষে অ্যাডভোকেট শিশির মনির হাইকোর্টে এ রিট দায়ের করেন।

রিটকারীদের মধ্যে শিশু, মহিলা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মাদ্রাসার শিক্ষক ও ব্যবসায়ী রয়েছেন। তাদের প্রত্যেকে রাজারবাগ দরবার শরিফের পীর ও তাদের মুরিদদের হয়রানিমূলক মামলার শিকার। রিট আবেদনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ও আইজিপিসহ ২০ জনকে বিবাদী করা হয়।

Print

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *