ডিএনবি নিউজ ডেস্ক:
শেরপুরের শ্রীবরদীতে পুলিশের সামনে এক কৃষককে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে। এ ঘটনায় পুলিশের এক উপ-পরিদর্শককে (এসআই) প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তবে পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই বলে জানিয়েছে নিহতের পরিবার। তারা বলছে, পুলিশ তাদের সঙ্গে আছে। দ্রুত আসামি ধরায় তারা পুলিশের ওপর খুশি।
গত রবিবার রাতে ফেসবুকে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। চার মিনিট ২০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজনের সামনে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেখানে পুলিশের তিন সদস্যও ছিলেন। গত ২৩ মার্চ শ্রীবরদী উপজেলার রাণীশিমুল ইউনিয়নের হালুয়াহাটি গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। যাকে হত্যা করা হয় তিনি হালুয়াহাটি গ্রামের কৃষক শেখবর আলী।
এ ঘটনায় ২৪ মার্চ সকালে শেখবরের ছোট ভাই মাহফুজ ৩৯ জনের নামে শ্রীবরদী থানায় মামলা করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় হালুয়াহাটি গ্রামের জিকু মিয়াকে।
এজাহারে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে দুই ভাই জজ মিয়া ও জিকু মিয়ার সঙ্গে শেখবরের বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে ২২ মার্চ জিকুসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেন শেখবরের মা মাহফুজা বেগম। ২৩ মার্চ বিকেলে শ্রীবরদী থানার এসআই ওয়ারেছ আলীসহ তিন পুলিশ সদস্য ঘটনা তদন্তে হালুয়াহাটি গ্রামে যান।
এরপর পুলিশের সামনেই জজ মিয়া ও জিকু মিয়া তাদের লোকজন নিয়ে শেখবরকে কুপিয়ে হত্যা করেন।
পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে জিকুর স্ত্রী, জজ মিয়া ও জজ মিয়ার স্ত্রীকে আটক করা হয়। পরদিন শেখবরের ভাইয়ের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে র্যাব-১৪ রাণীশিমুল ইউনিয়নের বালিঝুড়ির পাহাড় থেকে জিকুকে এবং রাত ১১টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মিজানুর রহমান রাজাকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে। মো. সাইফুল নামের একজনকেও এই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়।
মাহফুজ বলেন, ‘জিকু, জিকুর ছেলে স্বাধীন, সাইফুল, জজ মিয়া আমাদের সামনেই আমার ভাইকে নির্মমভাবে কুপাইয়া খুন করে। বাঁচাইতে গেলে আমাগো প্রতিবেশী সরাফত আলীরেও কোপ দেয়। আমারেও কোপায়। পুলিশ বাধা দিতে গেলে স্বাধীন, সাইফুলরা পুলিশের ওপর আক্রমণ করতে যায়।
‘পরে শ্রীবরদী থানা থাইক্কা আরও পুলিশ যাইয়া তিনজনরে ধইরা আনে। আমি আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই। পুলিশ আমাগো সঙ্গে আছে। তারা খুব তাড়াতাড়ি অনেক আসামি ধরছে। আর যাদের ধরা বাকি তাদেরও যেন তাড়াতাড়ি ধরে।’
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর অনেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
তবে শেখবরের ছেলে মিনার হোসেন বলেন, ‘পুলিশের তো জানের ভয় ছিল। এরাও রক্ষা করতে পারে নাই। পুলিশ আমাদের সঙ্গেই আছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আসামিদের বিচার চাই।’
শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিকু ও সাইফুল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘সেদিন ঘটনাস্থলে এসআই ওয়ারেছ আলীসহ কয়েকজন পুলিশ ছিল। তারা থাকার পরও কীভাবে, কেন এই ঘটনা ঘটল তা জানার চেষ্টা চলছে। ২৫ মার্চ ওয়ারেছকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
‘পুরো বিষয়টি পুলিশ সুপার মহোদয় দেখছেন। এ বিষয়ে যাদের গাফিলতি পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’