স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালুসহ তিন দফা দাবিতে বাংলাদেশের রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী আজ (রোববার) সকালে সায়েদাবাদ ও গাবতলি বাস টার্মিনালে এ বিক্ষোভ করেন তারা। এসময় শ্রমিকদের হাতে বিভিন্ন দাবি সংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন দেখা গেছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত সারা দেশে ২৪৯টি পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন সারা দেশে এ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে আজ। এছাড়া, ৪ঠা মে তাদের তিন দফা দাবিতে সারাদেশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে তারা।
শ্রমিক নেতারা দাবি করেছেন, লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ৫০ লাখ সড়ক পরিবহন শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। উপার্জনের পথ বন্ধ হওয়ায় তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এতে অর্ধাহারে-অনাহারে থাকা শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চালুর পাশাপাশি শ্রমিকদের আর্থিক অনুদান ও খাদ্য সহায়তা প্রদান এবং শ্রমিকদের জন্য ১০ টাকায় চাল বিক্রির ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়।
সাভারে বাস চালু
এদিকে, নির্দেশনা অমান্য করেই সাভারের সড়কে বাস চালাতে শুরু করেছে শ্রমিকেরা। যাত্রীরাও দ্বিগুণ ভাড়ায় গাদাগাদি করে এক স্থান থেকে অন্য অন্য স্থানে যাতায়াত করছে।
আজ (রোববার) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গেছে, সাভারের ঢাকা-আরিচা ও আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে চলাচল করছে স্থানীয় বাস। মাঝে মধ্যে দূরপাল্লার দুই-একটি বাস ও চলতে দেখা গেছে।
গাবতলীতে বিক্ষোভ
‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবহন চলবে’- এই শ্লোগানে বিক্ষোভ কর্মসূচি
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন নেতাকর্মীরা।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সম্পাদক মো. আব্বাস উদ্দিন বলেন, আমাদের রুটি-রুজির কথা চিন্তা করে আজ সকাল থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছি। এই কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় আগামী ৪ তারিখ সারা দেশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ফেডারেশনের নির্দেশে আমাদের এই বিক্ষোভ কর্মসূচি চলমান থাকবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত।
তিনি বলেন, লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন বাস চলাচল না করায় পরিবহন শ্রমিকরা মানবেতর দিনযাপন করছেন। অনেকে না খেয়ে দিনযাপন করছেন। অনেক পরিবহন মালিকরা ব্যাংকের ঋণের টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করতে পারছেন না। প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক বেকার অবস্থায় পড়ে আছে। রাজনৈতিক নেতারা রাজনৈতিক কর্মীদের সাহায্য সহযোগিতা করছে কিন্তু আমাদের খবর কেউ রাখছেন না। কারণ গাড়ি চলে তবেই আমরা খেতে পারি। অতি দ্রুত পরিবহন চালু করার দাবি জানাচ্ছি।
রাজশাহীতে বিক্ষোভ
অবিলম্বে গণপরিবহন চালুর দাবিতে রাজশাহীতে বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। রোববার সকালে সিরোইল বাস টার্মিনাল সংলগ্ন কার্যালয় থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে মিছিলটি বের হয়ে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত গিয়ে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
এসময় শ্রমিকরা বলেন, সারা দেশে নামমাত্র লকডাউন চলছে। বাজার-মার্কেট, দোকানপাট সব খোলা। শুধুমাত্র পরিবহন বন্ধ রয়েছে।
তারা বলেন, ঈদকে সামনে রেখে সবকিছু স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। তাহলে পরিবহন বন্ধ থাকবে কেন? সামনে ঈদ আমাদের দীর্ঘদিন কাজ নেই। কীভাবে ঈদ করব পরিবার নিয়ে? তাই অবিলম্বে বাস, ট্রাক চলাচল করার সুযোগ করে দিন।
এসময় ৫ মে’র মধ্যে গণপরিবহন চালু না করলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন শ্রমিকরা।
নেত্রকোনায় মিছিল
স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যানবাহন চলাচল,পরিবহন শ্রমিকদের আর্থিক অনুদানসহ খাদ্যসহায়তা প্রদান এবং সারাদেশে পরিবহন শ্রমিকদের ১০ টাকা কেজি চালের ব্যবস্থা চালুর দাবিতে নেত্রকোণায় জেলা মোটরযান কর্মচারী ইউনিয়নের উদ্যোগে আজ সকালে বিক্ষোভ মিছিল করেছে পরিবহন শ্রমিকরা।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার সকাল ১১টায় শহরের বারহাট্টা রোডে মোটরযান কর্মচারী ইউনিয়ন কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরিবহন শ্রমিকদের বিক্ষোভ মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
এসময় বক্তারা বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে পরিবহণ বন্ধ থাকায় তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অবিলম্বে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যানবাহন চলাচল শুরুর নির্দেশ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- জেলা মোটরযান কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আদব আলী, শ্রমিক নেতা সিবলী সাদিক, বজলুর রহমান ও আব্দুল জলিলসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।#