ডিএনবি নিউজ ডেস্ক:
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক শফিকুর রহমান সরকার নেত্রকোনা জেলায় যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও বিভিন্ন কর্মসুচীর টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদরাসার শিক্ষক নিয়োগ, উঠান বৈঠক ও বিভিন্ন প্রনোদনার টাকা সহ বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও জানিয়েছেন বিভিন্ন মাদরাসায় কর্মরত শিক্ষকগণ। দুর্নীতির আতুর ঘরে পরিণত জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশন অফিসটি যেন দেখার কেউ নাই।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেত্রকোনা জেলার উপ-পরিচালক শফিকুর রহমান সরকার ২০১৬ সালে নেত্রকোনায় যোগাদানের পর থেকেই অফিসটি দূর্নীতি ও টাকা আত্বসাৎ এর প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে শিক্ষকদের কাছে। তিনি ঢাকার একটি মাদরাসায় পড়াশোনা করা কালীন ছাত্রলীগের সভাপতি ও ক্যাডার ছিলেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তৎকালীন ডিজি শামীম মোঃ আফজাল সাহেবের সময় নামমাত্র নিয়োগ পরীক্ষা এবং যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে, আওয়ামীলীগের দলীয় প্রভাব খাটিয়ে তিনি নেত্রকোনা জেলার সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন।
যোগদানের পরপরই দলীয় প্রভাবে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রতি বছর শিক্ষক নিয়োগ ও কেন্দ্র প্রদান করে থাকেন। মোহনগঞ্জ উপজেলায় কোরআন শিক্ষা কেন্দ্র, প্রাক-প্রাথমিক কেন্দ্র ও মডেল মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেম নিয়োগে আত্মীয়করণ সহ হাতিয়ে নেন লক্ষ লক্ষ টাকা। নাম প্রকাশে অনি”ছুক একজন কেন্দ্র শিক্ষক বলেন, নেত্রকোনা জেলার উপ-পরিচালক শফিকুর রহমান সরকার স্যার এতো ঘুষ খান আমার জানা ছিল না। ইসলামিক ফাউন্ডেশনে এমন দুর্নীতি, এখন বলতে গেলে নিজেই লজ্জা পাই।
জেলার দশটি উপজেলায় মোট উনিশটি দারুল আরকাম মাদরাসায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে প্রতিটি মাদরাসায় ৮০,০০০/- আশি হাজার টাকা করে মোট ১৫,২০০০০/- (পনের লক্ষ বিশ হাজার) টাকা বরাদ্দ ছিল। নামমাত্র কিছু টাকা প্রদান করে বাকী সম্পূর্ণ টাকা ডি.ডি ও প্রধান শিক্ষকগণ মিলে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা পর্যায়ে ক্রয় কমিটি থাকা সত্বেও কমিটির সভাপতিকে বাদ দিয়ে মাদরাসার প্রধান শিক্ষক এবং ডি.ডি শফিকুর রহমান সরকারের যোগসাজসে ওই টাকা আত্মসাত করেন। এছাড়া প্রমোশন এবং বিশেষ প্রনোদনা পাইয়ে দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘরের এসি, মাছ, বিভিন্ন উপকরন সহ নগদ টাকা উৎকোচ হিসেবে গ্রহন করতেন। উনার ক্ষমতার দাপটে কোন শিক্ষক মূখ খুলে কথা বলার সাহস পেতেন না।
মোহনগঞ্জ, দুর্গাপুর ও কেন্দুয়া উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রের বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ইউনিসেফ এর উঠান বৈঠক, মডেল মসজিদের অতিরিক্ত বরাদ্দের টাকা, উপজেলা পর্যায়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ কর্মসুচীর টাকা, শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার দক্ষতাবৃদ্ধি বিষয়ক প্রশিক্ষণের টাকা প্রায় সব সময়ই আত্মসাৎ করে থাকেন এই ডি.ডি শফিকুর রহমান সরকার। এ ব্যপারে কেন্দ্রের কোন শিক্ষক বা জেলা অফিসের কেউ কোনো কথা বললে তাকে বদলীর ভয়ভীতি দেখিয়েই ক্ষান্ত হতেন না প্রয়োজনে আওয়ালীগের নেতাদের দিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করাতেন। ইতোপূর্বে এইসব ক‚কর্মের কারণে অন্যত্র বদলী আদেশ হলেও আওয়ামীগের নেতাদের মাধ্যমে তা বাতিল করে বহাল তবিয়তে থেকে যান এবং বলেন আমাকে এখানে থেকে কেউ বদলী করতে পারবে না।
নেত্রকোনা জেলায় উপ-পরিচালক পদে চাকুরি করা কালীন এতো অল্প সময়ের মধ্যে ময়মনসিংহের অভিজাত এলাকায় কোটি টাকার বাড়ী ক্রয়, নেত্রকোনার বিভিন্ন এলাকায় জায়গা কিনে বাসা নির্মান করেছেন। এই টাকার উৎস কোথায় নেত্রকোনাবাসী তা জানতে চায়। দেশ আজ নতুন করে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখছে। এতো দুর্নীতি করেও বীরদর্পে হাটছেন শফিকুর রহমান সরকার। তার এসব কু-কর্মের ব্যাপারে সঠিক তদন্তপূর্বক বিচারের মাধ্যমে কঠিন শাস্তি ও অপসারণের জোরদাবি জানাচ্ছে জেলার আপামর জনগণ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজ।