ডিএনবি নিউজ আন্ত: ডেস্ক
আজ ইসরায়েলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে এবং তা বেসামরিক ও সামরিক স্থাপনাগুলোকে ঘিরে ফেলেছে। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে এবং বিদেশ থেকে সহায়তা চেয়েছে। জেরুজালেমের পাহাড়ে আগুন লাগানোর সন্দেহে ৩ জনকে গ্রেপ্তারের কথা নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
সকাল থেকেই জেরুজালেমের পশ্চিম পাহাড়ে ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়ে, যা পরে বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রধান সড়কগুলোতে পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়।
জেরুজালেম ও তেল আবিবগামী মহাসড়কের কাছে আগুন প্রবলভাবে জ্বলছে, যাতে অন্তত ২২ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি দমকল বাহিনীর জেরুজালেম অঞ্চলের প্রধান বলেন, “আমরা এখনো এই বিশাল অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক দূরে রয়েছি।”
ইসরায়েলি অগ্নি নির্বাপণ কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছে, “ভালো অবস্থায় থাকলে আমরা আগামীকাল সকাল নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি।”
দমকল বাহিনীকে সহায়তা করতে সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমরা একটি জাতীয় জরুরি পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি, জীবন বাঁচাতে ও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের সমস্ত শক্তি নিয়োজিত করতে হবে।”
ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, পশ্চিম জেরুজালেমে তীব্র বাতাসের কারণে দমকল বাহিনীর অনেক দল আগুনে আটকে পড়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, পশ্চিম জেরুজালেমের একটি সামরিক ঘাঁটিতে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর সেনারা আগুনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
চ্যানেল ১২ জানায়, অভ্যন্তরীণ ফ্রন্টের জেরুজালেম ও কেন্দ্রীয় অঞ্চলের ব্রিগেড কমান্ডার বলেন, “এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড কীভাবে শুরু হয়েছে তা এখনো আমাদের অজানা।”
এছাড়া, পশ্চিম জেরুজালেমের আটটি জনপদের বাসিন্দাদের আগুনের কারণে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জেরুজালেমের হাদাসা আইন কারেম হাসপাতাল থেকেও রোগীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি অগ্নি নির্বাপন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পশ্চিম জেরুজালেমের আগুনের কারণে জেরুজালেম ও বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শত শত বেসামরিক নাগরিক আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
তারা আরও জানায়, তারা ২২ জন আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসা দিচ্ছে, যাদের মধ্যে ১২ জনকে ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টের কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলেও জানানো হয়।
ইসরায়েলি পুলিশ “এক্স” প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে জানিয়েছে, “জেরুজালেম পাহাড় ও ১ নম্বর মহাসড়ক এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ার কারণে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জনগণকে অনুরোধ করা হচ্ছে যেন তারা ওই এলাকায় যাতায়াত না করে।”
দাউদাউ আগুন
লাত্রুন ও বেইত শেমেশ এলাকার মধ্যবর্তী সড়ক বরাবর বন-জঙ্গল পুড়ে যাওয়ার সময় দাউদাউ আগুন দেখা গেছে। এতে বহু চালক তাদের গাড়ি রাস্তায় ফেলে আগুন থেকে পালিয়ে যান।
ঘন ধোঁয়ায় এলাকা ঢেকে গেছে, যা দৃষ্টিশক্তিকে মারাত্মকভাবে সীমিত করছে এবং অনেকেই সেখানে আটকে পড়ে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, জেরুজালেমের পশ্চিমে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত বসতি এলাকা খালি করে ফেলা হয়েছে। তারা দমকল কর্মীদের আগুন নেভানোর লড়াইয়ের ছবি সম্প্রচার করেছে।
প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, তীব্র গরম ও প্রবল বাতাসের কারণেই আগুন লেগেছে।
তবে পরে ইসরায়েলের সরকারি বেতার সংস্থা জানায়, জেরুজালেমের পাহাড়ে আগুন লাগানোর সন্দেহে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ইসরায়েলের চ্যানেল ১৪ জানিয়েছে, এই আগুন স্বাভাবিকভাবে লাগেনি, বরং কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে লাগিয়েছে।
ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গাফির বলেন, “এই আগুনের পেছনে ফিলিস্তিনিরা রয়েছে” এবং তিনি তাদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানান।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে সহায়তার জন্য ইতালি ও ক্রোয়েশিয়া থেকে অগ্নি নির্বাপক বিমান আসবে।
উৎসব বাতিল
এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠার ৭৭তম বার্ষিকীর উৎসব শুরুর সাথে সাথে ঘটে, যা ১৯৪৮ সালে দখলকৃত আরব ভূমিতে গঠিত হয়েছিল।
জরুরি সেবা ও উদ্ধার সংস্থা ঘোষণা করেছে, তারা “ইসরায়েলি স্বাধীনতা দিবস” নামে পরিচিত দিবসে — যা আসলে ফিলিস্তিনিদের ‘নাকবা’ (বিপর্যয়)-এর স্মরণদিবস — নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অংশ নিতে পারবে না।
আগুনের ভয়াবহতার কারণে কর্তৃপক্ষ এ উপলক্ষে আয়োজিত অনেক উৎসব ও অনুষ্ঠান বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে।