ডিএনবি নিউজ ডেস্ক :
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেটি এর আগে ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর সমর্থনে অনেক যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাবে ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করে গাজায় ইসরাইলি সেনাদের বর্বরোচিত হামলা জিইয়ে রেখেছিল সম্প্রতি গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি নতুন প্রস্তাব পেশ করেছে। নিরাপত্তা পরিষদে ১৪টি হ্যা ভোটে এটি অনুমোদন লাভ করে এবং রাশিয়া এতে ভোট দানে বিরত ছিল।
যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে উত্থাপিত প্রস্তাব সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে কোনো বিরোধিতা বা ভেটো ছাড়াই অনুমোদিত হয়। ৭ দফা প্রস্তাবে তিনটি পর্যায়সহ ব্যাপক যুদ্ধবিরতি চুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এই প্রস্তাবে জোর দেওয়া হয়েছে যে যদি প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় ৬ সপ্তাহের বেশি সময় লাগে তবে যতক্ষণ পর্যন্ত আলোচনা চলছে ততক্ষণ যুদ্ধবিরতি অব্যাহত থাকবে এবং সমস্ত চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মিশর এবং কাতারের প্রস্তুতি অব্যাহত থাকবে। এরপর দ্বিতীয় পর্ব শুরু হতে পারে বলে জানায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অনুমোদিত প্রস্তাবের বিষয়ে চুক্তির পরে এই প্রস্তাবের শর্তাবলী মেনে চলার ব্যাপারে জোর দেয়া হয়েছে এবং সমস্ত সদস্য রাষ্ট্র এবং জাতিসংঘকে এর বাস্তবায়নে সমর্থন করতে বলা হয়েছে।
আমেরিকা যেটি ইহুদিবাদী শাসনের সমর্থনে অনেক প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছিল এই সংকটময় মুহূর্তে এই শাসক গোষ্ঠীর প্রধান সমর্থক হিসাবে পরিচিত দেশটি বিভিন্ন কারণে যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব আনতে বাধ্য হয়েছিল।
প্রথম কারণ হল ইহুদিবাদী শাসন আগের চেয়ে অনেক বেশি ভাঙনের সম্মুখীন হচ্ছে। বেনি গ্যান্টজ এবং গাডি আইজেনকোট যুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। হ্যালি ট্রুপার গ্যান্টজের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের একজন হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে নেতানিয়াহুর জোট মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তাই অধিকৃত অঞ্চলে রাজনৈতিক ও সামরিক ভাঙন এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য একটি প্রস্তাব পাস করা হলে অধিকৃত অঞ্চলে এই ভাঙন ঢেকে রাখার একটি সুযোগ হতে পারে।
এরপর কারণ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রাক্কালে অভ্যন্তরীণ জনমতকে প্ররোচিত করা। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ফিলিস্তিনের সমর্থনে এবং ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠীর প্রতি মার্কিন নীতির নিন্দায় ব্যাপক পরিসরে বিক্ষোভ হয়েছে যার মধ্যে ছাত্র বিক্ষোভ এবং আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের সহযোগীতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাইডেনের মন্ত্রিসভা বিক্ষোভকারীদের চাপে পড়েছিল। যদিও আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের খুব বেশি সময় বাকি নেই বাইডেন প্রশাসন গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ ও লক্ষ্য হাসিলের জন্য ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো সম্প্রতি জাতিসংঘের মহাসচিব ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর নাম শিশুদের অধিকার লঙ্ঘনের কালো তালিকায় রেখেছেন। ইহুদিবাদী শাসক যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে গাজার শিশুদের বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ করেছে। গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব অনুমোদন করে আমেরিকা এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ ও সমালোচনা কমানোর চেষ্টা করছে।
আরেকটি কারণ হল গাজা যুদ্ধে প্রতিরোধকামী যোদ্ধারা যেকোনো যুদ্ধ বিরতিতে তাদের শর্তে অটল থাকা। তাদের অটল মনোবল এবং কার্যকর প্রতিরোধ শক্তি ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর জন্য পরিস্থিতিকে কঠিন করে তুলেছিল এবং এই শাসক গোষ্ঠীর অব্যাহত অস্তিত্বের জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে বাধ্য করেছিল। যাইহোক ইহুদিবাদী ইসরাইলের ইতিহাসের দিকে তাকালে এটা বলা যায় যে এটি ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতি মেনে চলবে না।
পরিশেষে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, গত ৮ মাসে ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর আচরণ থেকে বোঝা যায় যে এই সরকার জাতিসংঘ এবং নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের প্রতি ভ্রুক্ষেপ নেই। ইহুদিবাদী ইসরাইল সম্পর্কে জাতিসংঘের কোনো প্রস্তাব বাস্তবায়নের কোনো গ্যারান্টি নেই। কারণ এখন পর্যন্ত ইসরাইল জাতিসংঘে পাশ হওয়ার কোনো প্রস্তাবের উপর কাজ করেনি এবং বেশিরভাগ প্রস্তাব একটি প্রদর্শনী এবং প্রচারণামূলক শো ছাড়া আর কিছুই নয়।#
পার্সটুডে