আমার খুব কষ্ট হয় তবুও মেয়েকে এভাবেই বেঁধে রাখি

ডিএধনবি নিউজ ডেস্কঃ

‘‘খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গি এলো দেশে, বুলবুলি সব ধান খেয়েছে খাজনা দিবো কিসে’’ এমন ছড়া বলতে বলতে হাত বাঁধা অবস্থায় জান্নাতুল বৃষ্টি (৭) কে ভাত খাওয়াচ্ছে তার মা। জন্মের পর থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন আদরের মেয়ে জান্নাতুল। সামর্থ্য অনুযায়ী অনেক চিকিৎসা করিয়েও কোন কাজ হয়নি। অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসাও করাতে পারছেন না জান্নাতুলের পরিবার। তাই বাধ্য হয়েই আদরের সন্তানের দু‘হাতে কাপড় দিয়ে ঘরের বারান্দার খুঁটির সঙ্গে এভাবেই বেঁধে রেখে অন্যান্য কাজ করেন।

নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌর শহরের দশাল এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান মিয়ার শিশুকন্যা জান্নাতুল বৃষ্টি। উন্নত চিকিৎসার অভাবে দীর্ঘ সাত বছর ধরে এভাবেই বন্দিজীবন কাটছে তার। শাহজাহান মিয়া রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। পরিবারে তার দুই মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছেন। ২০১৪ সালের ৬ জুন স্বাভাবিক জন্ম হয় জান্নাতুল বৃষ্টির। জন্মের পর কোনো সাড়া-শব্দ না থাকায় তাকে তখন স্থানীয় হাসপাতালে নিলে সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন শাজাহান মিয়া।

পরবর্তিতে এক বছর বয়স থেকেই সে জান্নাতুল অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। তাকে ছেড়ে দিলে সে নিজেই নিজের মাথায় থাপ্পড় দেয় কোন সময় মাটির সাথে ধাক্কা দিয়ে সামনে যাকে পায় তাকে কামড়াতে এগিয়ে আসে। ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে চায়, অন্যদের মারধর করে। সামর্থ মোতাবেক গ্রামের কবিরাজ ও স্থানীয় ডাক্তারের কাছে নিয়েও কেনো লাভ হয়নি। এরপর থেকে শিশু বৃষ্টির দুহাত সব সময় কাপড় দিয়ে ঘরের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখেন তার বাবা-মা। পরবর্তিতে হাসপাতালের ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তারা উন্নত চিকিৎসার করাতে পরামর্শ দেন। কিন্তু অর্থের অভাবে তা আর সম্ভব হচ্ছে না।

বৃষ্টির চিকিৎসা নিয়ে শাহজাহান মিয়া বলেন, আমি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি, সারাদিন দৈনিক মজুরী হারে কাজ করে যে টাকা পাই তা দিয়ে কোন রকম চলে যায়। আমার দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ছোট একটা ঘরে বসবাস করি। আমার মেয়েকে ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাবো সে সামর্থ আমার নাই। তাই মেয়েটাকে নিয়ে অনেক কষ্টে কোন রকম দিন পার করছি। যদি সরকারি ভাবে মেয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হতো তাহলে আমার মেয়েটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারতো।

এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীব উল আহসান বলেন, ঘটনাটি শুনেছি, সত্যিই তা হৃদয় বিদারক। এ নিয়ে শাহাজান মিয়ার সাথে কথা বলে, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে অতি দ্রæত ওই মেয়ের সব রকম চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

Print

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *