“২৪ ঘন্টার ভিতরে আমি দেখতে চাইছিলাম আমার স্বামীর খুনিরা রে,পুলিশ প্রশাসনের লোক হইয়াও যদি সঠিক বিচার না পায় কি করবো”

ডিএনবি নিউজ ডেস্ক :

২৪ ঘন্টার ভিতরে আমি দেখতে চাইছিলাম আমার স্বামীর খুনিরা রে, কিন্তু এখন পর্যন্ত হেরা (পুলিশ) ওদের ধরতে পারছে না, আমার স্বামী পুলিশ প্রশাসনের লোক হইয়াও যদি সঠিক বিচার না পায়, কি করবো আমার কিছু বলার নাই!

এভাবে আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে খুন হওয়া পুলিশ সদস্য শফিকুল ইসলামের স্ত্রী রাবিয়া খাতুন।
তিনি বলেন,আমার স্বামী এমন কোনো খারাপ কাজই করে নাই এমন কোন অপরাধই করে নাই যে একজন দাঁড় করাইয়া কইবো যে ভাই আপনি এই অপরাধটা কের লাইগা করলাইন। কেন এমন হলো, কারা আমার স্বামীকে হত্যা করল কিছুই বুঝতে পারছি না।
তিনি আরো বলেন, ২৪ ঘন্টার ভিতরে আমি দেখতে চাইছিলাম আমার স্বামীর খুনিরা রে, কিন্তু এখন পর্যন্ত হেরা (পুলিশ) ওদের ধরতে পারছে না, এহন আইসা উল্টা জিগায় আপনি কাউরে সন্দেহ করেন, আমি সন্দেহ করতাম কি সিসিটিভি ফুটেজে সরাসরি দেখা যাইতেছে লোকটা দৌড় মারছে,দৌড় মারা লোকটারেও তো ধইরা জিগান যা! তারা এটাও পারছে না। আমার স্বামী পুলিশ প্রশাসনের লোক হইয়াও যদি সঠিক বিচার না পায়,কি করবো আমার কিছু বলার নাই।

কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে বাড়িতে এসে দুর্বৃত্তদের হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন পুলিশের এসআই শফিকুল ইসলাম (৪৫)। পুলিশের এই সদস্য জামালপুরে কর্মরত ছিলেন। শফিকুল ইসলামের দুর্গাপুরে এই সফরই হয়ে উঠল তার জীবনের শেষ সফর। পরিবার ও এলাকাবাসী শোকাহত এবং এই নির্মম হত্যার বিচার চান।
নিহত পুলিশ কর্মকর্তা (এসআই) পৌর শহরের বাগিচাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের নোয়াগাঁও এলাকার রফিকুল ইসলামের পুত্র।

জানা গেছে,শফিকুল ইসলাম জামালপুরে বেতারে এসআই পদে কর্মরত ছিলেন। গত ৮ জানুয়ারি ছুটিতে তিনি নিজ বাসায় এসেছিলেন। ঘটনার দিন গত বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারী) সন্ধ্যার দিকে বাগিচা পাড়ার নিজ বাসা থেকে বের হয়ে বাজারে গিয়েছিলেন শফিকুল ইসলাম। বাজার থেকে ফেরার পথে ৬টা ২০ মিনিটের দিকে দুর্গাপুর পৌর শহরের উকিলপাড়া এলাকার পান মহল সংলগ্ন একটি গলি সড়কে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে শফিকুল ইসলামকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হাত,পা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গা জখম করে। দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শফিকুল ইসলামের ডান পায়ের গুড়ালীর অংশ প্রায় আলাদা হয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছালে চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে ছয় জনকে আসামি করে দুর্গাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন নিহতের বাবা রফিকুল ইসলাম।
এদিকে গতকাল শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল কালাম আযাদ ও জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেব আলী পাঠান। পরে বিকেলে নিহত পুলিশ সদস্যের গ্রামের বাড়িতে জানাজায় অংশ নেন ও নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

জানাজা শেষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল কালাম আযাদ। তিনি জানান,ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং যাথাযতভাবে তদন্ত করা হবে এবং আমাদের বিশ্বাস অতিবিলম্বে এটার রহস্য উন্মোচন হবে।
আজ শনিবার সকাল ১১ টার দিকে দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো আসামীকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে অভিযান চলছে বলেও তিনি জানান।

Print

সম্পর্কিত পোস্ট

''আপনার মতামত দিন''

ডিএনবি নিউজ ২৪.কম