দুর্গাপুরে বেকারির বিষ খাচ্ছে মানুষ! আইনের তোয়াক্কাই করছে না মালিক পক্ষ
দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি-
স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী কিংবা কোমলমতি শিশুদের সুস্বাদু খাবার হিসেবে প্রধান পছন্দ বেকারির খাদ্য পণ্য। ক্ষুধা মেটাতে বয়স্ক মানুষদেরও খাবারের তালিকায় থাকে বেকারিতে তৈরি হওয়া মুখরোচক বিভিন্ন পণ্য। তবে এসব কতটা স্বাস্থ্যকর তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই কারোরই। তবে সাধারণ মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। সরেজমিনে গেলে ভৈরব বেকারি নামের একটি প্রতিষ্ঠানে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্য তৈরির চিত্র দেখা যায়।
নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌরশহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৭টি বেকারি কারখানা রয়েছে। কনফেকশনারির দোকানও রয়েছে অসংখ্য। দীর্ঘ দিন ধরে এসব বেকারি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা বিভিন্ন পণ্য বাজারজাত করে আসছে। কোনো প্রকার ভেজালবিরোধী অভিযান না থাকায় ব্যবসা পরিচালনা করতে মালিকদের কোনও অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়,বিভিন্ন স্থানের বাজারগুলোতে নামে-বেনামে গড়ে ওঠা বেকারি কারখানা গুলোতে আইন না মেনে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন খাদ্য পণ্য। এই গুলো বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদন ছাড়াই পরিচালনা হচ্ছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নি¤œমানের ভেজাল পণ্য তৈরি করে এরা দেদারসে বাজারজাত করছে তাদের বিভিন্ন পণ্য। বেশিরভাগ খাদ্যের প্যাকেটে মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ স্টিকার নেই। এতে হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য।
অভিযোগ রয়েছে,শহরসহ গ্রামের বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যায় কেক,বিস্কুট,পাউরুটি,বাটারবন,মিষ্টিসহ হরেকরকমের পণ্য। এসবের বেশিরভাগ প্যাকেটে মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ না থাকায় দোকানগুলোতে বেশিদিন রেখে বিক্রি হচ্ছে তা। আর এসব খেয়ে অনেক মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ যেন বেকারির বিষ খাচ্ছে মানুষ।
গতকাল দুর্গাপুর পৌর শহরের ঠাকুরবাড়িকান্দা এলাকার ভৈরব বেকারীতে গেলে এই বেহাল চিত্র উঠে এসেছে। ভেতরে নোংরা পরিবেশের দুর্গন্ধের ছড়াছড়ি। স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশে ভেজাল ও নিম্ন মানের উপকরণ এবং বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করে বেকারিতে অবাধে তৈরি করা হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী। বেকারি পণ্য উৎপাদনের কাজের লোকজন কোন ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করছে না। কারিগরদের গাঁয়ের ঘাম ঝরে পরছে খাদ্যতে,নেই কারো হাতে গø্যাভস, মেঝে সহ খাদ্য পণ্যের সাথে পড়ে রয়েছে বিড়ি সিগারেটের খোলস। বিভিন্ন খাদ্যে তৈরির সরঞ্জামে কীটপতঙ্গ থাকতে দেখা গেছে। তবুও এভাবেই পরিবেশে উৎপাদিত হচ্ছে বেকারি পণ্য। তাছাড়া কারখানায় পাওয়া গেছে মানব দেহের চরম ক্ষতিকর বিষাক্ত ক্যামিকেল,ক্ষতি কারক রং,পচা ডিমসহ নানান ক্ষতিকর পন্যের পাশাপাশি উৎপাদন ও মেয়াদ বিহীন পণ্য।
হান্নান মিয়া নামের এক ব্যক্তি বলেন,‘বেকারির তৈরি এসব খাবার মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ দেখার বাও নাই। আর ক্রেতারা তো আর এসব জিজ্ঞেস করে না। পরে বাড়িতে নেওয়ার পর মাঝেমধ্যে খাবার থেকে দুর্গন্ধ বের হয়।’
জানতে চাইলে ভৈরব বেকারি মালিক স্বপন মিয়া বলেন, আজকের পর থেকে আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে খাবার বানাবো। ‘আমাদের বিএসটিআই এর কাগজপত্র নাই। নিউজ করার দরকার নাই।’
উপজেলা স্যানেটারি ইন্সপেক্টর মো. আলী আকবর জানান বেকারি মালিকদের একাধিকবার বলা হয়েছে,কিছুদিন আগেও পরিদর্শন করে রিপোর্ট পাঠিয়েছি এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে ভেজাল মুক্ত খাদ্যদ্রব্য প্রস্তত করতে বলেছি। কিন্তু তারা কিছুই মানছেন না।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. তানজিরুল ইসলাম রায়হান বলেন,ভেজাল কেমিক্যাল ও নি¤œমানের উপকরণ দিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা খাবার খেলে যে কেউ আমাশয়,ডায়রিয়াসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম রকিবুল হাসান জানান,এসিল্যান্ড এর মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
জেলা নিরাপদ খাদ্য অফিসার মো. হাবিবুর রহমান বলেন,মনিটরিং করতে গিয়ে দেখেছি খুবই বাজে অবস্থা। ভেজাল পণ্য তৈরি না করা নির্দেশনা দিয়ে এসেছি এরপরও তারা নির্দেশনা না মানলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আল নোমান শান্ত