ডিএনবি নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে এক বছর আগে করোনা সংক্রমণ শুরু হবার পর সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পরিস্থিতি মোকাবেলায় “আমরা করোনার চেয়েও শক্তিশালী”-এমন মন্তব্য করে জনগণকে হাসির খোরাক যুগিয়েছিলেন।
ইতোমধ্যে দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল ২৯ মার্চ পর্যন্ত ৮ হাজার ৯৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮৯৫ জন। গতকাল একদিনে ৫ হাজার ১৮১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা দেশে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড।
করোনা সংক্রমণের উর্ধ্বগতিতে শঙ্কিত হয়ে স্বাস্থ্যমকন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, সংক্রমণ এ গতি অব্যাহত থাকলে হাসপাতালে রোগীর সংকুলান হবে না। এদিকে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বিবেচনায় দেশের ২৯টি জেলাকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
এই ২৯ জেলার মধ্যে রয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফেনী, চাঁদপুর, নীলফামারী, সিলেট, টাঙ্গাইল, রাজশাহী ও নওগাঁ।
উচ্চ ঝুঁকির এসব জেলায় সংক্রমণ প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, জেলা পর্যায়ে করোনা নিয়ন্ত্রণ কমিটি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটা সেই কমিটি ঠিক করবে আর অধিদফতর বিষয়টি মনিটর করবে।
ইতোমধ্যে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সোমবার সরকার নতুন করে ১৮ দফা নির্দেশনা ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সব ধরণের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে জনসমাগম সীমিত করা। এ সময় জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব অফিস ও কারখানার কাজ অর্ধেক জনবল দিয়ে চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অদমনীয় করোনা অতিমমারীর এক বছর পরে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে এখন থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও সব সহযোগী সংগঠনের যেকোনো কার্যক্রম স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে ঘরোয়াভাবে পালন করতে হবে।
আজ মঙ্গলবার সকালে সরকারি বাসভবনে এক ব্রিফিংয়ে সড়কপরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, বুধবার থেকে দেশের সব গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নেওয়া সাপেক্ষে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী দুই সপ্তাহ পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভাড়া আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন খালি রেখে এবং শতভাগ মাস্ক পরিধান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দিয়ে ওবায়দুল কাদের গণপরিবহন মালিক শ্রমিকদের এ বিষয়ে কঠোর হবার নির্দেশনাও দেন।
ট্রেন চলবে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে:
দেশে অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সব ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেনে মোট আসনের ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রির নির্দেশ দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি ও করোনার সংক্রমণরোধে অন্যান্য বিধি অনুসরণ করে ট্রেনে যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই আদেশ বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
এরআগে গত রাতে এ বিষয়ে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহাদাত আলী সংবাদমাধ্যমকে জানান, ট্রেন চলবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে। ট্রেনে জীবাণুনাশক স্প্রে করা হবে। যাত্রীদের জন্য থাকবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। মাস্ক ছাড়া কাউকে স্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এ ছাড়াও যাত্রার আগে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হবে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কোন ব্যক্তিকে যাত্রা করতে দেওয়া হবে না বলেও জানান এ রেল কর্মকর্তা।
করোনা রোগীদের জন্য প্লাজমা দান করার আহবান:
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদেরকে প্লাজমা দেওয়ার জন্য করোনা থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। একই সঙ্গে প্লাজমা প্রয়োজন রয়েছে রোগীদের জন্যও রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের গণস্বাস্থ্য প্লাজমা সেন্টারে যোগাযোগের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এই আহ্বান জানানো হয়।
বার্তায় বলা হয়েছে, ‘করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। করোনা চিকিৎসায় রোগীদের জন্য অনেক প্লাজমা প্রযোজন। করোনা থেকে সুস্থ ব্যক্তির রক্ত থেকে প্লাজমা তৈরি করা হয়। তাই করোনা থেকে সুস্থ ব্যক্তিরা রক্তদান করুন। একে অপরকে রক্তদানের বিষয় আগ্রহ সৃষ্টি করে অন্যের জীবন রক্ষায় অংশ নিন।’
গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে যেকোনো গ্রুপের ৪৫০ মিলি গ্রামের এক ব্যাগ প্লাজমা মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। হাসপাতালটিতে রয়েছে অত্যাধুনিক প্লাজমা সেন্টার। ২৪ ঘণ্টা এটি খোলা থাকে। ফলে যাদের প্লাজমা প্রয়োজন তাদেরকে ধানমণ্ডি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর প্লাজমা দেওয়ার ফলে রোগীর পুনরুজ্জীবন লাভ সম্ভব। যিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি সুস্থ হওয়ার ১৫ থেকে ২১ দিন পর যদি রক্তদান করেন এবং তার শরীরে যদি নিউট্রালাইজড অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে থাকে, তবে সেই প্লাজমা সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়। অর্থাৎ করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার ১৫ থেকে ২১ দিন পর রক্ত দিলে তা বেশি কার্যকর হয়।