ডিএনবি নিউজ ডেস্ক :
হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ও বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি দেওনার পীর অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী হেফাজতে ইসলাম কাপাসিয়া উপজেলা শাখার উদ্যোগে স্থানীয় বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন।
সম্প্রতি কাপাসিয়া উপজেলা হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপে সমকালীন প্রেক্ষাপটে শান্তি-শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে ‘মতবিনিময় সভা’ করেন।
আলোচনায় দেওনার পীর সাহেব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ সহবস্থানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। পাশাপাশি দরিদ্র, অনগ্রসর হিন্দুদের সন্তানের শিক্ষার ওপর বিশেষ জোর দেন। এ ক্ষেত্রে সংখ্যালঘু দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি। মতবিনিময় শেষে তিন ইউনিয়নে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিধবা, অসুস্থ, অসহায় ও প্রতিবন্ধীদের মধ্যে নগদ আর্থিক সাহায্য করেন।
পীর সাহেব দেওনা ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যারা নিহত হয়েছেন সকলের রুহের মাগফেরাত কামনায় এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারেন সেজন্য মহান রব্বুল আলামিনের দরবারে বিশেষ দোয়া করেন।
নিহতদের পরিবারদের ক্ষতিপূরণ ও আহতদের জন্য সুচিকিৎসার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
কাপাসিয়া সদর ইউনিয়ন কালীমন্দির পরিদর্শন শেষে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমরা হিন্দু-মুসলমান শতাব্দীর পর শতাব্দী শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করে আসছি, পরস্পরের সুখে-দুঃখে আমরা একে অন্যের পাশে থাকি সব সময়। জাতির ক্রান্তিলগ্নে কতিপয় রাজনৈতিক সুযোগ সন্ধানী স্বার্থান্বেষী মহল এই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বিনষ্ট করতে চায়। এ বিষয়ে সকল ধর্মাবলম্বীদের সজাগ থাকতে হবে। পতিত সরকারের কুচক্রী মহল বিভিন্ন মন্দির এবং সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় ও বাড়িঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগ করে তা ভিডিও করে দেশে-বিদেশে প্রচার করে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে বলে প্রপাগান্ডার মাধ্যমে দেশ ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। এর মাধ্যমে তারা প্রমাণ করতে চায় যে, এ দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে।
পীর সাহেব দেশ বিরোধী এ ধরনের ষড়যন্ত্রে প্রভাবিত না হয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার সাথে এহেন ঘৃণ্য চক্রান্ত প্রতিহত করার আহ্বান জানান। তিনি আরও আশ্বস্ত করেন, তাদের নৈতিক প্রয়োজনে কাপাসিয়ার উলামায়ে কেরাম পাশে থাকবেন।
অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে কাপাসিয়া উপজেলা হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ ও ওলামায়ে কেরাম কাপাসিয়া সদর কালীমন্দির, তরগাঁও বাঘিয়া শ্রী শ্রী লক্ষ্মী মন্দির, চিনাডুলী জালোপাড়া, তরগাঁও ঋষিপাড়া, চর খামের, চাঁদপুর তমাতলা মন্দির পরিদর্শন ও হিন্দুদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ এমন উদ্যোগের ফলে অভিভূত। তারা আশ্বস্ত হয়ে বলেন, এমন উদ্যোগ সারাদেশে নেওয়া হলে কোথাও সংখ্যালঘুরা নিজেদের অনিরাপদ মনে করবে না। তারা এমন মহতী উদ্যোগের জন্য অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরীসহ হেফাজত নেতৃবৃন্দের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কাপাসিয়া কওমী পরিষদের সভাপতি মুফতি আজমল খান কাসেমী, কাপাসিয়া ইমাম পরিষদের সভাপতি মাওলানা জালাল উদ্দীন, উপজেলা তানযিমুল মাদারিসিল কওমিয়ার মহাসচিব মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মুফতি জাকির হুসাইন, সাবেক সদর ইউপি চেয়ারম্যান আজগর হোসেন খান, সাংবাদিক কামাল ফকির ও সাইফুল ইসলাম শাহিন, হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বক্তব্য দেন কাপাসিয়া কালীমন্দিরের সহসভাপতি চিত্তরঞ্জন সাহা, পঙ্কজ ঘোষ, মাস্টার চন্দন চক্রবর্তী, বাবু অজিত ঘোষ, রিপন চক্রবর্তী, অন্যান্য মন্দিরের পুরোহিতবৃন্দ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা ক্বারী মুহাম্মদ আনোয়ার হুসাইন, মাওলানা মজিবুর রহমান, মাওলানা নাজমুল হুসাইন, মাওলানা লুতফুর রহমান, মাওলানা সুহাইল, মাওলানা আহসান উল্লাহ, মাওলানা আতাউল্লাহ, মাওলানা আতাউল্লাহ খামেরী, মাওলানা ইলিয়াস, মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন, মাওলানা আব্দুস সালাম, মাওলানা আক্তারুজ্জামান, মাওলানা জোবায়ের, হাফেজ হেদায়াতুল্লাহ, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুল গাফফার, মুফতি আব্দুল জলিল, হাফেজ উসমান গনি, মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা মজিবুর রহমান, মাওলানা শাকের প্রমুখ।