শিক্ষা সিলেবাসে ইসলামপন্থিদের নিয়ে বৈষম্যমূলক ইতিহাস বাতিলের দাবি

ডিএনবি নিউজ ডেস্ক :

সাধারণ শিক্ষায় সবক্ষেত্রে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা ও কওমি শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়াসহ ৪ দফা দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী কওমি ছাত্র আন্দোলন। মঙ্গলবার ( ৭ জানুয়ারি ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এ দাবি জানানো হয়।

বৈষম্যবিরোধী কওমি ছাত্র আন্দোলনের অন্যান্য দাবিগুলো হচ্ছে— জাতীয় শিক্ষা সিলেবাসে ইসলামপন্থিদের নিয়ে বৈষম্যমূলক ইতিহাস বাতিল করে সঠিক ইতিহাস ও অবদান অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; যারা কৌশলে ইসলামপন্থিদের ইতিহাস ও অবদান এড়িয়ে গেছে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে; কওমি সনদের যথাযথ মূল্যায়ন এবং রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে কওমি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এবং বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহি:বিশ্বে কওমি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অর্জনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

মানববন্ধনে আন্দোলনের সমন্বয়ক তোফায়েল আহমেদ বলেন, সম্প্রতি প্রকাশিত পাঠ্যপুস্তকে জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন শ্রেণির অবদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

কিন্তু ৭০-এর অধিক শাহাদাত বরণকারী মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সাহসিকতার কথা তুলে ধরা হয়নি। আমরা মনে করি এটি এক ধরনের বৈষম্য ও ইতিহাস গোপনের অপচেষ্টা। যা কওমি শিক্ষার্থীরা কখনোই মেনে নেবে না।

তিনি আরও বলেন, এমন পদক্ষেপের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, আপনারা সঠিক ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরবেন।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন— বৈষম্যবিরোধী কওমি ছাত্র আন্দোলনের সহকারী সমন্বয়ক মাকসুদুর রহমান, মোস্তফা হোসাইন, জসিম উদ্দীন প্রমুখ।




কিশোরগঞ্জে মাহফিল চলাকালে দুর্বৃত্তের গুলি, আহত ২

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের চরশোলাকিয়া এলাকায় বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল চলাকালে দুর্বৃত্তের ইয়ার গানের গুলিতে দুইজন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন, ওই মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি আল আমিন সাদী (৩৮) এবং আগত বক্তার সফরসঙ্গী মো. জুলহাস মিয়া (১৯)।

রবিবার (৫ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টার দিকে জেলা শহরের চরশোলাকিয়া এলাকায় মাদরাসাতুল উলুমিল ইসলামিয়া দারুল জান্নাত কওমি মহিলা মাদরাসার উদ্যোগে কুমুদিনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলে এই ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাহফিলের মঞ্চে উঠার সময় অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত ইয়ার গান থেকে গুলি ছোড়ে। এ সময় মাদরাসার পরিচালক মুফতি আল আমিন সাদী (৩৮) এবং আগত বক্তার সফরসঙ্গী মো. জুলহাস মিয়া (১৯) গুলিবিদ্ধ হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। গুরুতর আহত না হওয়ায় চিকিৎসক তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেন। এ ঘটনার পর মাহফিলটি বাতিল হয়ে যায়।

কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনাটি তদন্ত করছে। ঘটনাস্থল থেকে এয়ার গানের গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে।

হাআমা/




মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল হক

ডিএনবি নিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অধ্যাপক মিয়া মোহাম্মদ নুরুল হক। তিনি সরকারি মাদ্রাসা-ই আলীয়া ঢাকার হেড মাওলানা।

আজ সোমবার (৬ জানুয়ারি) সিনিয়র সহকারী সচিব এ কে এম লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগে ন্যাস্তকৃত বি সি এস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের কর্মকর্তাকে বর্ণিত পদ ও কর্মস্থলে প্রেষণে বদলী/পদায়ন করা হলো।




গাইবান্ধায় সড়ক দুর্ঘটনায় মসজিদের ইমামের মৃত্যু

ডিএনবি নিউজ ডেস্ক :

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় জাহিদ হাসান (৩০) নামে এক মসজিদের ইমাম নিহত হয়েছেন।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বেলা ১১ টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহরের পশ্চিম চৌমাথা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত জাহিদ হাসান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দাড়িদহ কালুগাড়ী গ্রামের ছোলায়মান আলীর ছেলে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হাফেজ জাহিদ হাসান সকালে শ্বশুরবাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে বগুড়ায় নিজের কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। গোবিন্দগঞ্জ পৌর এলাকার পশ্চিম চৌমাথা এলাকায় পৌঁছালে তিনি মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা খান। এতে তার মাথা ও মুখ থেঁতলে যায় এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও আলেমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।

এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মোজাফফর হোসেন বলেন, “নিহত জাহিদ হাসান বগুড়ার একটি মসজিদে ইমামতি করতেন। তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।”

এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।




ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু আজ

ডিএনবি নিউজ ডেস্ক :

বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে আজ বুধবার শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে সকাল সাড়ে ১০টায় এ মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এ সময় আরো উপস্থিত থাকবেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন।

এ বছর ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর হংকংসহ সাতটি দেশের অংশগ্রহণে ৩৬২টি স্টল এবং প্যাভিলিয়ন অংশ নিচ্ছে।

কুড়িল, ভুলতা, গাজীপুর এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে মেলা চলাকালে ৩০০টি বিআরটিসি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। মেলায় প্রবেশমূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৫০ টাকা এবং শিশুদের জন্য ২৫ টাকা।

২০২২ সালে শেরেবাংলানগর থেকে স্থানান্তরিত হওয়ার পর এটি পূর্বাচল নতুন ভেন্যুতে তৃতীয় সংস্করণ।




গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে ইসরাইল: জাতিসংঘ

ডিএনবি নিউজ ডেস্ক :

ইহুদিবাদী ইসরাইল অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তর।

ইহুদিবাদী বাহিনী উত্তর গাজার সবগুলো হাসপাতালকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে। গাজার সবচেয়ে বড় শিফা হাসাপাতালসহ বহু হাসপাতাল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। যেগুলোর ভবন এখনও দাঁড়িয়ে আছে সেগুলোরও স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার মতো অবস্থা নেই। দখলদার ইহুদিবাদীরা উত্তর গাজাকে সম্পূর্ণ জনমানবশূন্য করে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর গতকাল (মঙ্গলবার) প্রকাশিত ২৮ পৃষ্ঠার এক প্রতিবেদনে আরো বলেছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি সেনারা গাজার ২৭টি হাসপাতাল ও ১২টি ক্লিনিকে অন্তত ১৩৬ বার হামলা চালিয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনে এসব হামলার প্রতিটি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এসব হামলায় চিকিৎসক, নার্স, মেডিক্যাল স্টাফ, রোগী ও আশ্রয়প্রার্থীরা ব্যাপক মাত্রায় হতাহত হয়েছেন এবং এসব বেসামরিক অবকাঠামোর ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর আরো বলেছে, ইসরাইলের এসব হামলায় গাজা উপত্যকার চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। এর ফলে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুবিধা থেকে সেখানকার ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি নাগরিক বঞ্চিত হচ্ছেন। উত্তর গাজার কোনো হাসপাতালের আর চিকিৎসা সেবা দেয়ার অবস্থা নেই। এ অবস্থার অবসান ঘটানোর জন্য প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। #

# পার্সটুডে




‘ইসলাম-আতঙ্ক ছড়ানোর’ বিরুদ্ধে কথিত সংগ্রামের মার্কিন সরকারের সনদ কেন মুসলমানদের কাছে ঘৃণ্য?

ডিএনবি নিউজ আন্তঃ ডেস্ক :

বাইডেন সরকার সম্প্রতি ইসলাম-বিদ্বেষ ও ‘ইসলাম-আতঙ্ক ছড়ানোর’ বিরুদ্ধে কথিত ‘সংগ্রামের কৌশল বা নীতির গাইড’ নামের এক অদ্ভুত ইশতেহার বা সনদ প্রকাশ করেছে।

বাইডেনের নেতৃত্বাধীন মার্কিন সরকার যখন গাজায় ইসরাইলি গণহত্যাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে সমর্থন করে যাচ্ছে তখন নিজের চেহারাকে পবিত্র দেখাতে বা ফেরেশতাসুলভ সৎভাবের ইমেজ দেখাতে মার্কিন মুসলমানদের বিরুদ্ধে সরকারি সহিংসতার শেকড়গুলোর বিষয় উল্লেখ করে ‘ইসলাম-আতঙ্কের বিরুদ্ধে সংগ্রাম’ নামক একটি প্রতীকি অনুমোদন করে। এ ছাড়াও গত ১২ ডিসেম্বর ইসলাম-আতঙ্ক ও আরব-বিদ্বেষ ছড়ানোর বিরুদ্ধে কথিত ‘সংগ্রামের কৌশল বা নীতির গাইড’ নামের এক অদ্ভুত ইশতেহার বা সনদ প্রকাশ করেছে। এই সনদ ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

প্রতীকি এই পদক্ষেপ সম্পর্কে ‘মিডল-ইস্ট আই’ নামক ওয়েবসাইট এক প্রতিবেদনে লিখেছে, কথিত এই গাইড মুসলিম সমাজের সঙ্গে বাইডেন সরকারের অগভীর যোগাযোগ ও মূলত প্রতীকি যোগাযোগের সর্বশেষ প্রদর্শনী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানদের জন্য হোয়াইট হাউজে একজন সম্পর্ককারীর প্রয়োজন নেই। তারা যা চান তা হল তাদের বিরুদ্ধে সরকারি সহিংসতার অবসান। এই প্রতিবেদনের অন্য অংশে বাইডেনের একটি শ্লোগান উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবার জন্য স্বাধীনতা ও সুযোগ! অথচ এই শ্লোগান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতিগত শুদ্ধি অভিযান বা সব সময় গণহত্যায় জড়িত থাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য, অন্য জাতিগুলোকে কোণঠাসা করে রাখা, অন্য জাতিগুলোকে প্রত্যাখ্যান করা ও নানা হিংস্রতার আলোকে উপনিবেশবাদী এই সরকারের মিথ্যাচারকেই স্পষ্ট করছে। কিন্তু এই কল্পকাহিনীর বেশি তিক্ত দিকটি হল এইসব প্রকাশ্য মিথ্যাচার সত্ত্বেও মার্কিন সরকার তার ওইসব কাজ এখনও অব্যাহত রেখেছে।

গত ১৫ মাস ধরে গাজায় চলছে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি গণহত্যা বা জাতিগত নির্মূল অভিযান যার প্রতি রয়েছে সর্বাত্মক মার্কিন মদদ। আর ওই কথিত সনদ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরব ও মুসলমানদের ব্যাপার হোয়াইট হাউজের সর্বশেষ পদক্ষেপ।

বাইডেনের কথিত এই কৌশল বা নীতির গাইড শুরু হয়েছে ছয় বছর বয়সের মার্কিন ফিলিস্তিনি মুসলিম শিশুর শিরচ্ছেদের ঘটনার পর থেকে। ওই শিশুকে ছুরি মেরে হত্যা করে তার বাড়ির মালিক। এই সনদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পরিবেশকে ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পরবর্তী পরিস্থিতির সাথে তুলনা করা হয়েছে যখন দেশটির মুসলিম, আরব ও এশিয় নাগরিকরা সহিংসতার শিকার হত। এইসব সমাজের বিরুদ্ধে সহিংসতার প্রতি বাইডেনের নিন্দা এ বিষয়ে মার্কিন সরকারের অবহেলাকে ম্লান করারই চেষ্টা।

যা-ই হোক, বাইডেন মুসলমানদের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারি সহিংসতার এক বিশেষ দৃষ্টান্তকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। আর এই বিশেষ বিষয়টি হল মুসলমানদের ওপর ট্রাম্প সরকারের নিষেধাজ্ঞা। এরপর নিজের আত্মপ্রশংসা করে বাইডেন বলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি দেশের মুসলমানদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির ভুল নীতি তিনি তার প্রেসিডেন্সি শুরু হওয়ার প্রথমেই বাতিল করেছিলেন।

ইসলাম-আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে বাইডেন সরকারের সংগ্রামের শ্লোগান বাস্তবে পরিহাসপূর্ণ হয়েছে যখন এই সরকার গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি গণহত্যাকে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে মার্কিন মুসলিম ও আরবদের অধিকার লঙ্ঘন এবং তাদের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপকে গুরুত্ব না দেয়ার পাশাপাশি নিজেই এ জাতীয় অপরাধের এক বড় সংঘটকে পরিণত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফিলিস্তিন বিষয়ক দপ্তরের সাবেক সচিব মাইকেল কিসি বলেছেন, ওয়াশিংটন ফিলিস্তিনিদের ব্যথা ও বেদনায় উদ্বিগ্ন নয়, বরং ইসরাইলের স্বার্থই রক্ষা করে যাচ্ছে। গাজায় ইসরাইলি পদক্ষেপ যে ভুল তা জানা সত্ত্বেও ইসরাইলি গণহত্যার প্রতি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন যা পুরোপুরি লজ্জাজনক। এ বিষয়টি এতটাই প্রতিবাদ ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে যে মার্কিন ডেমোক্রেট দলীয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ‘জেনোসাইড জো’ তথা ‘গণহত্যাকারী জো’ উপাধি পেয়েছেন।

অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম ও আরব-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে কথিত মুক্ত ও ন্যায়-ভিত্তিক মার্কিন সমাজে প্রতিরোধের গুরুত্ব সম্পর্কে বাইডেনের গালভরা বুলি উচ্চারণ বিরাজমান বাস্তবতার বিপরীত। এ ধরনের দাবি বা শ্লোগানের ফলে মুসলমান ও আরবদের ওপর সহিংসতা বা ঘৃণার মাত্রা মোটেই কমছে না বা এই সংকটকে ধামাচাপা বা ম্লান করে দেখানোও সম্ভব হবে না। বরং এর উদ্দেশ্য হল মার্কিন সরকার আরব ও মুসলমানদের নিরাপত্তা ও কল্যাণে আগ্রহী এমন বিভ্রান্তিকর ভাব তুলে ধরে তাদেরকে শান্ত রাখারই চেষ্টা মাত্র।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম-আতঙ্ক ছড়ানোর বিষয়টি খুবই পরিকল্পিত ও সংঘবদ্ধ ঘটনা যা দিনকে দিন নানা নতুন মাত্রা লাভ করছে। ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষের ঘটনা সেখানে রাজনৈতিক, সামাজিক, মিডিয়া-কেন্দ্রীক ও শারীরিক মাত্রা পেয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম-বিদ্বেষ ও ইসলাম-আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়ার তৎপরতা পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে। ইসলাম ও মুসলমানদের বিকৃত চেহারা উপস্থাপন এবং মুসলমানদের ওপর নানা সীমাবদ্ধতা আরোপ, বৈষম্য এবং আইনি ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে ক্রমবর্ধমান গতিতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোনো কর্মকর্তা ইসলাম-বিদ্বেষের আগুনে ঘি ঢালছেন। এক্ষেত্রে রিপাবলিকান দলীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা বিশেষভাবে স্মরণীয় । মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়ার এ প্রচেষ্টাকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গোটা পাশ্চাত্যেও জোরদার করেছেন।

ট্রাম্পের শাসনামলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উগ্র ডানপন্থী গ্রুপগুলোর সংখ্যা বেড়েছে লক্ষণীয় মাত্রায়। মুসলমান মনে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যে শিখদেরকেও গালাগালি করা হচ্ছে অনেক সময়। শিক্ষা ও বিভিন্ন পেশার চাকরি বা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও মুসলমানরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে পাশ্চাত্যে। #

পার্সটুডে




ইরান না থাকলে ইসরাইলের প্রকাশ্য ও গোপন ষড়যন্ত্র থেকে বিশ্বকে বাঁচাবে কে?

ডিএনবি নিউজ ডেস্ক :

ইসরাইল বছরের পর বছর ধরে পশ্চিম এশিয়ায় “পোড়া মাটি” নীতি অনুসরণ করে আসছে। গাজা উপত্যকায় লাগাতার বোমা হামলা এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গণহত্যা থেকে শুরু করে ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা এবং সিরিয়ায় বিমান হামলা পর্যন্ত সবকিছুই এ অঞ্চলে ইসরাইলের অস্থিতিশীলতা নীতিরই অংশ।

‘ইরানের পরমাণু কর্মসূচি থেকে বিশ্বকে নাজাত দিতে পারে ইসরাইল’ শীর্ষক প্রতিবেদনে একটি ইহুদি সংস্থার গবেষক ইয়াকুব কাতজ অসাধারণ আত্মবিশ্বাসের সাথে এবং ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে দাবি করেছেন যে, ইসরাইল এককভাবে বিশ্বকে “হুমকি” থেকে বাঁচাতে প্রস্তুত। ইরানের”। কিন্তু মূল প্রশ্ন হল: ইরান যদি না থাকে তাহলে কে পৃথিবীকে সবচেয়ে বড় অশুভ শক্তি অর্থাৎ ইসরাইলের হাত থেকে বাঁচাবে? ইসরাইলের প্রকাশ্য ও গোপন ষড়যন্ত্র ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কে দাঁড়াবে? যে ইসরাইলের কর্মকাণ্ড সারা বিশ্বের স্বাভাবিক রাজনীতিকে ব্যবহত করছে এবং পশ্চিম এশীয় অঞ্চলের একটি অংশকে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে পরিণত করেছে?

ইসরাইল, এমন একটি অশুভ শক্তি যার প্রভাবে বিশ্ব রাজনীতি ব্যাহত হচ্ছে

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিশ্বব্যাপাী বহু সংঘাতে ইসরাইলের ভূমিকা অনস্বীকার্য। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এমনকি জাতিসংঘে ইহুদিবাদীদের প্রভাব বিশ্ব রাজনীতিকে ন্যায়বিচার ও স্থিতিশীলতার পথ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। AIPAC-এর মতো শক্তিশালী ইহুদিবাদী লবি যা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিকে ইসরাইলের সেবায় পরিণত করেছে যার ফলে শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে যা কিনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরইলের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ।

উদাহরণস্বরূপ, বিগত দশকগুলোতে ইসরাইল পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর জন্য কল্যাণকর হবে এমন কোনও জোট বা চুক্তিতে পৌঁছার পথে বাধা সৃষ্টি করে আসছে। কিছু আরব দেশে প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে ইসরাইল এ ষঢ়যন্ত্র চালিয়ে আসছে। ব্যাপক “গণবিধ্বংসী অস্ত্র” আছে এমন ভিত্তিহীন দাবি তুলে ২০০৩ সালে ইরাকে যে হামলা চালানো হয়েছিল তার পেছেন ইহুদিবাদীদের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। আর এর ফলে ইরাকের ধ্বংস এবং এইএস’র মতো জঙ্গি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আবির্ভাব ছাড়া আর কিছুই ছিল না।

গণহত্যা এবং পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধের বিস্তার

ইসরাইল বছরের পর বছর ধরে পশ্চিম এশিয়ায় “পোড়া মাটি” নীতি অনুসরণ করে আসছে। গাজা উপত্যকায় লাগাতার বোমা হামলা এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গণহত্যা থেকে শুরু করে ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা এবং সিরিয়ায় বিমান হামলা পর্যন্ত সবকিছুই এ অঞ্চলে ইসরাইলের অস্থিতিশীলতা নীতিরই অংশ।

গাজা উপত্যকার বর্তমান অবস্থা এবং এই এলাকাটি ২০ লাখ মানুষের উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত করা ইসরাইলের নৃশংসতার প্রতীক। এই অঞ্চলে ক্রমাগত আগ্রাসন এবং এর বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার জন্য পশ্চিমের ওপর ইসরাইলের অব্যাহত চাপ তেলআবিবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্পষ্ট উদাহরণ। তবে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইসরাইলের ব্যাপক প্রভাবের কারণে বিশ্ব গাজা ইস্যুতে নীরব রয়েছে।

পার্সটুডে/




ইজতেমা ময়দান দখলের পর লাঠি হাতে ফিরেছে সাদপন্থীরা

ডিএনবি নিউজ ডেস্ক :

হামলা চালিয়ে দখলের পর টঙ্গী ইজতেমা ময়দান ছেড়ে লাঠি হাতে ফিরে গেছে তাবলীগ জামাতের সাদপন্থীরা।

টঙ্গীতে ইজতেমার মাঠ ও আশপাশের তিন কিলোমিটারের মধ্যে সভা-সমাবেশের ওপর পুলিশের নিষেধাজ্ঞা জারির পর ময়দান ছাড়ে তারা।

টঙ্গীতে সরেজমিনে থেকে আবদুল্লাহ বিন মুস্তফার ধারণ করা ভিডিওতে এমন তথ্য জানা গেছে।

ফেসবুকে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা গেছে, লাঠি হাতে ফিরে যাচ্ছে হামলা করে নিরীহদের খুন করা সাদপন্থীরা।

এর আগে বুধবার গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দুপুর ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকার কথা বলা হয়েছে।

এরপর থেকেই হামলা করে দখলকারী সাদপন্থীদের মাঠ ছেড়ে চলে যেতে দেখেন স্থানীয়রা।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, “নির্দেশনা অনুযায়ী মাঠ ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। ময়দান ও আশপাশে কোনো জমায়েত করা যাবে না। কোনো ধরনের মাইক ব্যবহারও করা যাবে না।”

মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে সাদের অনুসারী সন্ত্রাসীদের বর্বর হামলায় এখন পর্যন্ত তাবলীগ জামাতের মূলধারা আলেমওলামাদের পরিচালিত শূরায়ি নেজামের তিনজন মুসল্লি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে আজ বাদ মাগরিব টঙ্গী ময়দানে সাদপন্থীদের হামলায় নিহত কাকরাইল মারকাযে শূরায়ি নেজামের একজন শহীদের জানাযা সম্পন্ন হয়েছে।




‘বদলে যাওয়া’ নতুন বাংলাদেশ, এক অন্য রকম বিজয় দিবস

ডিএনবি নিউজ ডেস্ক :

ছত্রিশে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে এক নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে। নতুন এই দেশে তাই এবারের বিজয় দিবসের আনন্দে নব নব মাত্রা যুক্ত হচ্ছে।

বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্য ও বীরত্বের অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন ১৬ ডিসেম্বর। আজ আমাদের বিজয় দিবস। এই দিনটি বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। আজ আমাদের বলার দিন, “বল বীর বল উন্নত মম শির।”

পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম সগৌরবে উচ্চারণের দিন আজ ১৬ ডিসেম্বর। আজ আমাদের বলার দিন-“পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, রক্ত লাল রক্ত লাল রক্ত লাল।”

বিজয় দিবস উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বিজয়ের দিনে তারা নতুন বাংলাদেশ গড়ার যাত্রাকে সমুন্নত রাখতে জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।

গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর বিজয় দিবসটা ঠিক কীভাবে উদ্‌যাপন করা হবে-তা নিয়ে বেশ কৌতূহল ছিল জনমনে। অবশ্য এবারের বিজয় দিবস সগৌরবে যথাযথ মর্যাদায় দেশে ও বিদেশে উদযাপন করছে বাংলাদেশিরা।

তবে পাল্টে গেছে বাস্তবতা। সরকার পাল্টেছে, শীর্ষ ব্যক্তিসহ সরকারি লোকগুলো বদলে গেছে। আর বদলে গেছে দেশের রাজনীতির হাওয়া; নতুন হাওয়ায় গণমানুষের প্রকৃত স্বাধীনতার বিজয় অর্জনের আকাঙ্ক্ষাকেই লক্ষ্য ধরা হচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ফ্যাসিজমের অভিযোগ। তারা এখন বিচারের কাঠগড়ায়। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকারের। সেদিন শেখ হাসিনা আশ্রয় নেন ভারতে। এরপর ৩ দিন সরকারবিহীন থাকে দেশ। ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দেশের ভার যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ৪ মাস পর এলো মহান বিজয় দিবস। সব রাজনৈতিক দল, আপামর জনতা মিলে উদযাপন করছে এবারের বিজয় দিবস। শুধু নেই আওয়ামী লীগ। এবার আর বিজয় দিবসে বাজবে না আওয়ামী লীগের জয়গান। উল্টো মানবতাবিরোধী অপরাধে তাদের বিচারের দাবি দেশজুড়ে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

যেভাবেই আর যে রূপান্তরের মধ্য দিয়েই সামনে যাক দেশ, ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাওয়া বাংলাদেশ হোক উন্নত, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ; এ-ই চাওয়া লাল-সবুজের পাতাকার জমিনে সর্বজনে।

বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন আজ। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের মাহেন্দ্রক্ষণ; চিরগৌরবে সমুজ্জ্বল মহান বিজয় দিবস। পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে বাংলাদেশ নাম প্রতিষ্ঠার মাইলফলকের দিন। আজ বিজয়ের দিন, আজ বাঙালি জাতির গর্বের দিন।

১৯৭১ সালের এই দিনে পৃথিবীর মানচিত্রে জাতি নিজেদের জন্য বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাম সংযোজিত করেছিল এক বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে।

পাকিস্তানের নৃশংস হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে যখন এ দেশের ঘুমন্ত নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর ট্যাংক-কামানের মতো ভয়ংকর মারণাস্ত্র নিয়ে গণহত্যার পৈশাচিকতায় মেতে উঠেছিল, তখন থেকেই শুরু হয়েছিল প্রতিরোধ সংগ্রাম। দীর্ঘ ৯ মাস হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মতো এক শক্তিমান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসম যুদ্ধ করেছিলেন দেশের সব ধর্ম, বর্ণ, ভাষার বীর সন্তানেরা।

৩০ লাখ মানুষের প্রাণ, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম আর বিপুল সম্পদহানির ভেতর দিয়ে মুক্তির সংগ্রামে সফল হয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। ছিনিয়ে এনেছিলেন চূড়ান্ত বিজয়। জাতিকে মুক্ত করেছিলেন পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে। ৫৩ বছর আগে ডিসেম্বরের এই দিনে কুয়াশাঢাকা বাংলার আকাশে উদিত হয়েছিল স্বাধীনতার সূর্য, উড্ডীন হয়েছিল লাল-সবুজ পতাকা।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেছেন, ‘‘১৬ ডিসেম্বর, আমাদের মহান বিজয় দিবস। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা অর্জন করেছি কাঙ্ক্ষিত বিজয়। আমরা পেয়েছি একটি সার্বভৌম দেশ, পবিত্ৰ সংবিধান, নিজস্ব মানচিত্র ও লাল-সবুজ পতাকা। পেয়েছি স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে নিজেদের অস্তিত্ব আর মর্যাদা। বিজয়ের আনন্দঘন এ দিনে আমি দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে জানাই বিজয়ের শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন।’’

তিনি বলেন, ‘‘বিজয়ের এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি সব জাতীয় নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সম্ভ্রমহারা দুই লক্ষ মা-বোন, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থক, বিদেশি বন্ধু, যুদ্ধাহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যসহ সর্বস্তরের জনগণকে, যারা আমাদের বিজয় অর্জনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন। আমি আরো স্মরণ করি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে। জাতি তাদের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।’’

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘‘এ বছর জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন এ দেশের মানুষ দেখেছে তা অচিরেই বাস্তবায়িত হবে বলে আমি মনে করি। বীরের দেশ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠা লাভ করবে-ইনশাআল্লাহ।’’

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেন, ‘‘বিজয় দিবস কেবল আমাদের গর্বের উৎস নয়, এটি আমাদের শপথের দিনও। শপথ আমাদের একতাবদ্ধ থাকার, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করার।’’

তিনি বলেন, ‘‘আজকের এই দিনে, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি এবং তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাই। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং সুশাসিত বাংলাদেশ গঠনে সবাই মিলে একসাথে কাজ করার অঙ্গীকার করছে।’’

‘‘দেশকে আরো উন্নত ও শক্তিশালী করতে এবং স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল ভোগ করতে আমরা বদ্ধপরিকর,’’ বলেও তিনি অঙ্গীকার করেন।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এবার প্রথমবারের মতো ঢাকাসহ সব জেলা-উপজেলায় বসছে ‘বিজয় মেলা’। রাজধানীতে ‘বিজয় মেলা’ হবে পুরান ঢাকার জনসন রোডের ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রাঙ্গণে। সেখানে এখন চলছে শেষ মুহূর্তে প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে ২২টি স্টল বসানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের চারপাশের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে।

কর্মসূচি

যথাযোগ্য মর্যাদায় ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয়ভাবে দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

১৬ ডিসেম্বর প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবস উদযাপনের আনুষ্ঠনিক সূচনা হবে।

সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

বিদেশি কূটনৈতিক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সব সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে।

মাসব্যাপী ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, রচনা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করবে।

দেশের সব জেলা ও উপজেলায় দিনব্যাপী আড়ম্বরপূর্ণ বিজয়মেলা আয়োজন করা হয়েছে। শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসেও দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

বঙ্গভবনে অপরাহ্নে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারগুলোকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। মহানগর, জেলা ও উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ দিবসটি উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করছে।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হয়েছে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করার কথা।

চট্টগ্রাম, খুলনা, মোংলা ও পায়রা বন্দর, ঢাকার সদরঘাট, পাগলা (নারায়ণগঞ্জ) ও বরিশালসহ বিআইডব্লিউটিসির ঘাটে এবং চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জ ঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজসমূহ দুপুর ২টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জনসাধারণের দর্শনের জন্য উন্মুক্ত রাখ হয়েছে।

দেশের সব শিশুপার্ক ও জাদুঘরসমূহ বিনা টিকিটে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে এবং সিনেমা হলে বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে।

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশসহ বিভিন্ন ররাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।