এবার পবিত্র ঈদুল আযহায় ৯১ লাখের বেশি পশু কোরবানি হয়েছে

ডিএনবি নিউজ ডেস্ক :

ঈদুল আজহা মুসলিম বিশ্বের অন্যতম বড় একটি ধর্মীয় উৎসব। ধর্মীয় উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এবারের ঈদুল আজহায় সারা বিশ্বে বিপুল সংখ্যক পশু কোরবানি করা হয়েছে। এরই ধারাবহিকতায় এ বছর বাংলাদেশে ঈদুল আজহায় ৯১ লাখের বেশি পশু কোরবানি করা হয়। এর মধ্যে গরু ও ছাগলের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

১০ জুন মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. মামুন হাসান।

সরকারি সংস্থা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, ২০২৫ সালে দেশে ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪টি পশু কোরবানি হয়েছে। যার মধ্যে গরু/ মহিষ ৪৭ লাখ ৫ হাজার ১০৬টি; ছাগল / ভেড়া ৪৪ লাখ ৩০ হাজার ৬৬৮ টি; অন্যান্য ৯৬০ টি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর মূলত পশু কোরবানির হিসাব করে থাকে। অধিদপ্তর বলছে স্তরায়িত দৈব নমুনায়নের (স্ট্র্যাটিফায়েড র‍্যান্ডম স্যাম্পলিং) ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করে এবারের হিসাব করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলার ৩টি গ্রাম (ছোট, মাঝারি এবং বড়) থেকে অন্তত এক শতাংশ নমুনা সংগ্রহ করে হিসাবটি করা হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার কোরবানির পশু অবিক্রীত ছিল ৩৩ লাখ ১০ হাজার ৬০৩ টি। কারণ হিসেবে অধিদপ্তর বলছে, এবার কোরবানির পশুর উৎপাদন বেশি ছিল। তাই পশু অবিক্রীত থাকাটা অস্বাভাবিক নয়।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবার সবচেয়ে কম পশু কোরবানি হয়েছে সিলেট বিভাগে। এই সংখ্যা ৩ লাখ ১৯ হাজার ৮২৩ টি। এরপর কম পশু কোরবানি হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। এই সংখ্যা ৩ লাখ ৮৩ গাজার ১৬২ টি। আর সবচেয়ে বেশি পশু কোরবানি হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। এই সংখ্যা ২৩ লাখ ২৪ হাজার ৯৭১ টি গবাদি পশু। এর পর বেশি কোরবানি হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এই সংখ্যা ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৪০ টি। চট্টগ্রাম বিভাগে কোরবানি হয়েছে ১৭ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩২ টি গবাদিপশু। খুলনা বিভাগে কোরবানি হয়েছে ৮ লাখ ৪ হাজার ২২৪ টি গবাদিপশু।

বরিশাল বিভাগে কোরবানি হয়েছে ৪ লাখ ৭৮৩ টি গবাদিপশু। রংপুর বিভাগে কোরবানি হয়েছে ৯ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯৯ টি গবাদিপশু।




আজ পবিত্র হজের দিন: লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফা ময়দান

ডিএনবি নিউজ ডেস্ক  :

আজ পবিত্র হজের দিন, ইওয়ামুল আরাফাহ। ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে পবিত্র আরাফার পাহাড় ঘেরা ময়দান ছাপিয়ে আকাশ-বাতাস মুখর ও প্রকম্পিত ।

স্থানীয় সময় সূর্যোদয় পর্যন্ত মিনায় অবস্থান শেষে ফজরের পর পরই আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে রওনা হন মুসল্লিরা। সেখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করে হজের খুতবা শুনবেন লাখো মুসল্লিরা।

আরফাতের ময়দানে অবস্থানকেই মূল হজ বিবেচনা করা হয়। এবার পবিত্র হজের খুতবা দেবেন মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদের ইমাম শায়খ সালেহ বিন হুমাইদ। যা ৩৪টি ভাষায় সরাসরি সম্প্রচারিত হবে।

আজ প্রভাত থেকে সৌদি আরবের মক্কা নগরীর আরাফার আদিগন্ত মরু প্রান্তর এক অলৌকিক পুণ্যময় শুভ্রতায় ভরে উঠেছে। সফেদ-শুভ্র দুই খণ্ড কাপড়ের এহরাম পরিহিত হাজিদের অবস্থানের কারণে সাদা আর সাদায় একাকার। পাপমুক্তি আর আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ এই পবিত্র হজ্ব পালন করেছেন।

আজ ফজরের পর গোটা দুনিয়া থেকে আগত ২৫ লক্ষাধিক মুসলমান ঐতিহাসিক আরাফার ময়দানে উপস্থিত হচ্ছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশি হজযাত্রীর সংখ্যা ৮৭ হাজারের বেশি। আজ ৯ জিলহজ মূল হজের দিন তারা এখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন।

আরাফার ময়দানের মসজিদে নামিরায় জোহরের নামাজের আগে এ বছর পবিত্র হজের খুতবা দেবেন মসজিদে হারামের প্রখ্যাত খতিব ও সৌদি সিনিয়র ওলামা পরিষদের সদস্য ড. শায়খ সালেহ বিন হুমাইদ।

সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা আরাফার ময়দানে অবস্থান করে আল্লাহ তা’আলার জিকির আসকার ইবাদতে মশগুল থাকবেন। অতঃপর মুজদালিফার উদ্দেশ্যে আরাফার ময়দান ত্যাগ করবেন। মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ এশার ওয়াক্তে একত্রে পড়বেন এবং সারা রাত অবস্থান করবেন। সেই সঙ্গে জামরাতে নিক্ষেপ করার জন্য ৭০টি কংকর এখান থেকে সংগ্রহ করবেন। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ পড়ে পুনরায় মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন।

১০ জিলহজ মিনায় পৌঁছার পর হাজিদের পর্যায়ক্রমে চারটি কাজ সম্পন্ন করতে হয়। প্রথমে মিনাকে ডান দিকে রেখে হাজিরা দাঁড়িয়ে শয়তানকে (জামারা) পাথর নিক্ষেপ করবেন। দ্বিতীয় কাজ আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করা। তৃতীয় পর্বে মাথা ন্যাড়া করা। চতুর্থ কাজ তাওয়াফে জিয়ারত।

জিলহজের ১১ তারিখ মিনায় রাত যাপন করে দুপুরের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে হাজিরা বড়, মধ্যম ও ছোট শয়তানের ওপর সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করবেন। আর এ কাজটি করা সুন্নত।

১২ জিলহজ মিনায় অবস্থান করে পুনরায় একইভাবে হাজিরা তিনটি শয়তানের ওপর পাথর নিক্ষেপ করবেন। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা শেষ হলে অনেকে সূর্যাস্তের আগেই মিনা ছেড়ে মক্কায় চলে যাবেন। আর মক্কায় পৌঁছার পর হাজিদের একটি কাজ অবশিষ্ট থাকে। সেটি হচ্ছে কাবা শরিফ তাওয়াফ করা। একে বলে বিদায়ি তাওয়াফ।

স্থানীয়রা ছাড়া বিদায়ি তাওয়াফ অর্থাৎ কাবা শরিফে পুনরায় সাত বার চক্কর দেওয়ার মাধ্যমে হাজিরা সম্পন্ন করবেন পবিত্র হজব্রত পালন।

প্রসঙ্গত, প্রতি বছরের মতো পবিত্র হজের খুতবা এবারও বাংলাসহ বহু ভাষায় অনুবাদ করা হবে। বাংলায় অনুবাদ করবেন চার জন বাংলাদেশি। তারা হলেন ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান, মুবিনুর রহমান ও নাজমুস সাকিব। তারা সবাই মক্কার উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন।




এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা

ডিএনবি নিউজ ডেস্ক:

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে যেকোনো একদিন অনুষ্ঠিত হবে।

শুক্রবার (৬ জুন) সন্ধ্যা ৭টায় পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ ঘোষণা দেন।

ভাষণের শুরুতেই তিনি পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী, নারী-পুরুষ, বয়স্ক ও বৃদ্ধ—সবাইকে জানাই আন্তরিক সালাম ও শুভেচ্ছা।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমি জানি, আগামী জাতীয় নির্বাচন কবে হবে—তা জানার জন্য রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর আগ্রহ রয়েছে। এর আগেও বলেছি, এই নির্বাচন ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬-এর মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। সেই সময়সীমার মধ্যেই আমরা নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি করছি।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা দেখেছি, ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন ছিল জাতীয় সংকটের মূল কারণ। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় দুর্বলতা, অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্বের মাধ্যমে একসময় ক্ষমতা দখলদার একটি রাজনৈতিক দল ফ্যাসিবাদী রূপ নেয়। এমন নির্বাচনের আয়োজকরা জাতির কাছে অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হয়েছে, আর যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারাও জনগণের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছে।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই সরকারের অন্যতম বড় দায়িত্ব একটি পরিচ্ছন্ন, শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। যাতে করে জাতি আর কোনো সংকটে না পড়ে। এজন্য সবচেয়ে জরুরি হলো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার। যেসব প্রতিষ্ঠান নির্বাচন পরিচালনায় জড়িত, সেখানে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা না গেলে পূর্ববর্তী আত্মত্যাগ ও গণআন্দোলনের সব অর্জন ব্যর্থ হয়ে যাবে।”

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন—এই তিনটি ম্যান্ডেট নিয়েই আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমি বিশ্বাস করি, আগামী রমজানের ঈদের মধ্যেই বিচার ও সংস্কার বিষয়ে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থানে পৌঁছাতে পারব। বিশেষ করে, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার—যা জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি আমাদের সম্মিলিত দায়—সে বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে।”

তিনি বলেন, “এই ম্যান্ডেট বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেই আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং চলমান সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করেছি। সেই আলোকে আমি আজ ঘোষণা করছি—আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে যেকোনো একদিন অনুষ্ঠিত হবে। এই ঘোষণার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন যথাসময়ে নির্বাচনের বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রকাশ করবে।”

ভবিষ্যতের নির্বাচনী চিত্র তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, যা দেখে অভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মা তৃপ্তি পাবে। এমন একটি নির্বাচন চাই, যেখানে থাকবে সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি, সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থী ও রাজনৈতিক দল। এই নির্বাচন যেন ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের উদাহরণ হয়ে থাকে।”