ইমাম খোমেনী (রহ.) বৈষয়িক অগ্রগতির পাশাপাশি আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিকতা রক্ষার ওপর জোর দিতেন

ডিএনবি নিউজ ডেস্ক :

ইমাম খোমেনী (রহ.) মনে করতেন সুস্থ মত-বিনিময় ও নানা ধরনের চিন্তার পারস্পরিক অনুধাবনই হচ্ছে ইসলামী সংস্কৃতি প্রসারের সঠিক পন্থা। কোনো একটি ধারণা ছড়িয়ে দেয়ার সবচেয়ে ভালো ভিত্তি হল চিন্তাশীলদের সঙ্গে নিয়মতান্ত্রিক সংলাপ, যুদ্ধ, বিতর্ক বা হৈ-চৈ করা নয়।

বিশ্ব দর্শন দিবস উপলক্ষে সংস্কৃতির দর্শন সংক্রান্ত এক সেমিনারে ইমাম খোমেইনীর এই দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন সাইয়্যেদ মোহসেন শারিফি নামক একজন গবেষক।

তিনি বলেছেন, ইমাম খোমেনীর মতে সংস্কৃতি হচ্ছে সমাজের মাথা ও চিন্তাশীলদের মগজ এবং সংস্কৃতি হচ্ছে সব সুখ ও দুর্ভাগ্যের উৎস। সংস্কৃতি সমাজের নির্মাতা, সমৃদ্ধির মূল ও দুর্ভাগ্যের গোড়া।

ইমাম খোমেনীর মতে সংস্কৃতিরও রয়েছে নানা ধরণ। যেমন, ইসলামী সংস্কৃতি, উপনিবেশবাদী সংস্কৃতি, নির্ভরশীলতার সংস্কৃতি, রাজকীয় সংস্কৃতি, স্বাধীনতার সংস্কৃতি ইত্যাদি। ইসলামী ও পশ্চিমা সংস্কৃতি উভয়ই বৈশ্বিক মিশনের দাবিদার, কিন্তু ইমাম খোমেইনীর মতে অবিকৃত ইসলামী সংস্কৃতি পশ্চিমা সংস্কৃতির চেয়ে উন্নত। পশ্চিমা সভ্যতা ও সংস্কৃতি নানা রোগের কারণে ভেঙ্গে যাচ্ছে ও বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি মনে করতেন।

শারিফি আরও বলেছেন, মুসলিম চিন্তাবিদদের কেউ কেউ বলছেন প্রগতির একমাত্র পথ পশ্চিমা সংস্কৃতি, তাদের আরেক দল মনে করেন, পশ্চিমা সংস্কৃতিকে পুরোপুরি পরিহার করা উচিত ও এ সংস্কৃতির কোনো সাফল্য নেই, আর ইসলামী ও পশ্চিমা সংস্কৃতির মধ্যে বন্ধন বা সম্পর্ক ইসলামী সভ্যতাকে বিচ্যুত ও দুষিত করবে। অন্য এক দল মনে করেন সভ্যতা ও সংস্কৃতিগুলোর মধ্যে সম্পর্ক যদি যৌক্তিক হয় ও সমালোচনা-ভিত্তিক তাহলে তা বয়ে আনবে উন্নতি ও প্রগতি। ইমাম খোমেনী এই তৃতীয় ধারার চিন্তার ভিত্তিতেই কাজ করতেন ও কথা বলতেন।

তিনি আরও বলেছেন, ইমাম খোমেনী মনে করতেন পশ্চিমা সংস্কৃতির কিছু দুর্বলতা হল উপনিবেশবাদ ও পশ্চিমা-বিকারবাদ। আর এর ভালো দিক তথা বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিকে ভিন্নভাবে নেয়া উচিত। বৈষয়িকতা ও বস্তুতান্ত্রিক উন্নতির পাশাপাশি নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতারও বিকাশ ঘটানোর ওপর জোর দিয়ে তিনি একটি তৃতীয় বা মধ্যবর্তী চিন্তার অনুসরণ করতেন।

ইমাম খোমেনী (র) মনে করতেন সুস্থ মত-বিনিময় ও নানা ধরনের চিন্তার পারস্পরিক অনুধাবনই হচ্ছে ইসলামী সংস্কৃতি প্রসারের সঠিক পন্থা। কোনো একটি ধারণা ছড়িয়ে দেয়ার সবচেয়ে ভালো ভিত্তি হল চিন্তাশীলদের সঙ্গে নিয়মতান্ত্রিক সংলাপ, যুদ্ধ, বিতর্ক বা হৈ-চৈ করা নয়। আর এই ছিল ইমাম খোমেনীর সংলাপের সংস্কৃতি।

শারিফি আরও বলেছেন, ইমাম খোমেনী পশ্চিমা সংস্কৃতির নেতিবাচক দিক মোকাবেলার জন্য ও পশ্চিমা আধিপত্যবাদ মোকাবেলার জন্য ইসলামের দিকে ফিরে আসার ওপর গুরুত্ব দিতেন। এভাবে ইমাম পশ্চিমা সংস্কৃতির সঙ্গে সংঘাতের বিষয়টিকে বিবেচনা করতেন যে পশ্চিমা সংস্কৃতি ও চিন্তাধারা সমসাময়িক যুগে কথিত মানবতাবাদ, ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদ ও ভোগবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত।




গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি ট্রাম্পের: হুঁশিয়ারি দিল জার্মানি ও ফ্রান্স

ডিএনবি নিউজ ডেস্ক:

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ড দখল করতে সামরিক শক্তি প্রয়োগের যে হুমকি দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ন্যাটো জোটের সদস্য জার্মানি ও ফ্রান্স।

ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ড দখল করতে সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারেন। ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, “গ্রিনল্যান্ড বা পানামা খাল দখলের জন্য সামরিক বা অর্থনৈতিক শক্তি প্রয়োগ থেকে আমি বিরত থাকব, এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য এগুলো প্রয়োজন।” এর আগে ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম মেয়াদে গ্রিনল্যান্ড কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প।

তবে ডেনমার্ক পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে, গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয় এবং দ্বীপটি তার বাসিন্দাদের সম্পত্তি।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎ
এদিকে, গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেছেন, “সীমানার অখণ্ডতার নীতি প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তা খুব ছোট বা খুব শক্তিশালী দেশ যাই হোক না কেন।”

তিনি আরও বলেন, “ন্যাটো আমাদের প্রতিরক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার এবং আটলান্টিক মহাসাগর উপকূলীয় দেশগুলোর সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু।”

অন্যদিকে, ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-নোয়েল ব্যারো বলেছেন, “এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, কখনোই বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সার্বভৌম সীমান্তে আক্রমণ করতে দেবে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন।”

বুধবার ফ্রান্স ইন্টার রেডিওকে দেওয়া সক্ষাৎকারে তিনি বলেন: “আপনি যদি আমাকে প্রশ্ন করেন আমেরিকা, গ্রিনল্যান্ড আক্রমণ করবে কি না। আমার উত্তর হবে- না। আমরা কি এমন এক যুগে প্রবেশ করেছি যেখানে আবারও শক্তিশালীদের টিকে থাকার নিয়ম দেখা দিচ্ছে? তাহলে এর উত্তর হবে- হ্যাঁ। তাহলে কি আমাদের নিজেদেরকে ভয় ও উদ্বেগে কাবু হতে দেওয়া উচিত, অবশ্যই না। আমাদের জেগে উঠতে হবে এবং নিজেদের শক্তি গড়ে তুলতে হবে।”

গ্রিনল্যান্ডের জনসংখ্যা মাত্র ৫৭ হাজার। দ্বীপটি ব্যাপক স্বায়ত্তশাসন ভোগ করলেও অর্থনীতির ক্ষেত্রে কোপেনহেগেনের ভর্তুকির ওপর নির্ভরশীল এবং এটি এখনো ডেনমার্কের রাজ্যের অংশ। গ্রিনল্যান্ডে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বিরল খনিজের মজুদ রয়েছে, যা ব্যাটারি এবং উচ্চপ্রযুক্তি পণ্যের নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ।
# পার্সটুডে