‘ইসলাম-আতঙ্ক ছড়ানোর’ বিরুদ্ধে কথিত সংগ্রামের মার্কিন সরকারের সনদ কেন মুসলমানদের কাছে ঘৃণ্য?

ডিএনবি নিউজ আন্তঃ ডেস্ক :

বাইডেন সরকার সম্প্রতি ইসলাম-বিদ্বেষ ও ‘ইসলাম-আতঙ্ক ছড়ানোর’ বিরুদ্ধে কথিত ‘সংগ্রামের কৌশল বা নীতির গাইড’ নামের এক অদ্ভুত ইশতেহার বা সনদ প্রকাশ করেছে।

বাইডেনের নেতৃত্বাধীন মার্কিন সরকার যখন গাজায় ইসরাইলি গণহত্যাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে সমর্থন করে যাচ্ছে তখন নিজের চেহারাকে পবিত্র দেখাতে বা ফেরেশতাসুলভ সৎভাবের ইমেজ দেখাতে মার্কিন মুসলমানদের বিরুদ্ধে সরকারি সহিংসতার শেকড়গুলোর বিষয় উল্লেখ করে ‘ইসলাম-আতঙ্কের বিরুদ্ধে সংগ্রাম’ নামক একটি প্রতীকি অনুমোদন করে। এ ছাড়াও গত ১২ ডিসেম্বর ইসলাম-আতঙ্ক ও আরব-বিদ্বেষ ছড়ানোর বিরুদ্ধে কথিত ‘সংগ্রামের কৌশল বা নীতির গাইড’ নামের এক অদ্ভুত ইশতেহার বা সনদ প্রকাশ করেছে। এই সনদ ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

প্রতীকি এই পদক্ষেপ সম্পর্কে ‘মিডল-ইস্ট আই’ নামক ওয়েবসাইট এক প্রতিবেদনে লিখেছে, কথিত এই গাইড মুসলিম সমাজের সঙ্গে বাইডেন সরকারের অগভীর যোগাযোগ ও মূলত প্রতীকি যোগাযোগের সর্বশেষ প্রদর্শনী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানদের জন্য হোয়াইট হাউজে একজন সম্পর্ককারীর প্রয়োজন নেই। তারা যা চান তা হল তাদের বিরুদ্ধে সরকারি সহিংসতার অবসান। এই প্রতিবেদনের অন্য অংশে বাইডেনের একটি শ্লোগান উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবার জন্য স্বাধীনতা ও সুযোগ! অথচ এই শ্লোগান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতিগত শুদ্ধি অভিযান বা সব সময় গণহত্যায় জড়িত থাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য, অন্য জাতিগুলোকে কোণঠাসা করে রাখা, অন্য জাতিগুলোকে প্রত্যাখ্যান করা ও নানা হিংস্রতার আলোকে উপনিবেশবাদী এই সরকারের মিথ্যাচারকেই স্পষ্ট করছে। কিন্তু এই কল্পকাহিনীর বেশি তিক্ত দিকটি হল এইসব প্রকাশ্য মিথ্যাচার সত্ত্বেও মার্কিন সরকার তার ওইসব কাজ এখনও অব্যাহত রেখেছে।

গত ১৫ মাস ধরে গাজায় চলছে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি গণহত্যা বা জাতিগত নির্মূল অভিযান যার প্রতি রয়েছে সর্বাত্মক মার্কিন মদদ। আর ওই কথিত সনদ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরব ও মুসলমানদের ব্যাপার হোয়াইট হাউজের সর্বশেষ পদক্ষেপ।

বাইডেনের কথিত এই কৌশল বা নীতির গাইড শুরু হয়েছে ছয় বছর বয়সের মার্কিন ফিলিস্তিনি মুসলিম শিশুর শিরচ্ছেদের ঘটনার পর থেকে। ওই শিশুকে ছুরি মেরে হত্যা করে তার বাড়ির মালিক। এই সনদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পরিবেশকে ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনার পরবর্তী পরিস্থিতির সাথে তুলনা করা হয়েছে যখন দেশটির মুসলিম, আরব ও এশিয় নাগরিকরা সহিংসতার শিকার হত। এইসব সমাজের বিরুদ্ধে সহিংসতার প্রতি বাইডেনের নিন্দা এ বিষয়ে মার্কিন সরকারের অবহেলাকে ম্লান করারই চেষ্টা।

যা-ই হোক, বাইডেন মুসলমানদের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারি সহিংসতার এক বিশেষ দৃষ্টান্তকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন। আর এই বিশেষ বিষয়টি হল মুসলমানদের ওপর ট্রাম্প সরকারের নিষেধাজ্ঞা। এরপর নিজের আত্মপ্রশংসা করে বাইডেন বলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি দেশের মুসলমানদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির ভুল নীতি তিনি তার প্রেসিডেন্সি শুরু হওয়ার প্রথমেই বাতিল করেছিলেন।

ইসলাম-আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে বাইডেন সরকারের সংগ্রামের শ্লোগান বাস্তবে পরিহাসপূর্ণ হয়েছে যখন এই সরকার গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি গণহত্যাকে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে মার্কিন মুসলিম ও আরবদের অধিকার লঙ্ঘন এবং তাদের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপকে গুরুত্ব না দেয়ার পাশাপাশি নিজেই এ জাতীয় অপরাধের এক বড় সংঘটকে পরিণত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফিলিস্তিন বিষয়ক দপ্তরের সাবেক সচিব মাইকেল কিসি বলেছেন, ওয়াশিংটন ফিলিস্তিনিদের ব্যথা ও বেদনায় উদ্বিগ্ন নয়, বরং ইসরাইলের স্বার্থই রক্ষা করে যাচ্ছে। গাজায় ইসরাইলি পদক্ষেপ যে ভুল তা জানা সত্ত্বেও ইসরাইলি গণহত্যার প্রতি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ওয়াশিংটন যা পুরোপুরি লজ্জাজনক। এ বিষয়টি এতটাই প্রতিবাদ ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে যে মার্কিন ডেমোক্রেট দলীয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ‘জেনোসাইড জো’ তথা ‘গণহত্যাকারী জো’ উপাধি পেয়েছেন।

অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম ও আরব-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে কথিত মুক্ত ও ন্যায়-ভিত্তিক মার্কিন সমাজে প্রতিরোধের গুরুত্ব সম্পর্কে বাইডেনের গালভরা বুলি উচ্চারণ বিরাজমান বাস্তবতার বিপরীত। এ ধরনের দাবি বা শ্লোগানের ফলে মুসলমান ও আরবদের ওপর সহিংসতা বা ঘৃণার মাত্রা মোটেই কমছে না বা এই সংকটকে ধামাচাপা বা ম্লান করে দেখানোও সম্ভব হবে না। বরং এর উদ্দেশ্য হল মার্কিন সরকার আরব ও মুসলমানদের নিরাপত্তা ও কল্যাণে আগ্রহী এমন বিভ্রান্তিকর ভাব তুলে ধরে তাদেরকে শান্ত রাখারই চেষ্টা মাত্র।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম-আতঙ্ক ছড়ানোর বিষয়টি খুবই পরিকল্পিত ও সংঘবদ্ধ ঘটনা যা দিনকে দিন নানা নতুন মাত্রা লাভ করছে। ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষের ঘটনা সেখানে রাজনৈতিক, সামাজিক, মিডিয়া-কেন্দ্রীক ও শারীরিক মাত্রা পেয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম-বিদ্বেষ ও ইসলাম-আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়ার তৎপরতা পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে। ইসলাম ও মুসলমানদের বিকৃত চেহারা উপস্থাপন এবং মুসলমানদের ওপর নানা সীমাবদ্ধতা আরোপ, বৈষম্য এবং আইনি ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে ক্রমবর্ধমান গতিতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোনো কর্মকর্তা ইসলাম-বিদ্বেষের আগুনে ঘি ঢালছেন। এক্ষেত্রে রিপাবলিকান দলীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃস্থানীয় ভূমিকা বিশেষভাবে স্মরণীয় । মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়ার এ প্রচেষ্টাকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গোটা পাশ্চাত্যেও জোরদার করেছেন।

ট্রাম্পের শাসনামলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উগ্র ডানপন্থী গ্রুপগুলোর সংখ্যা বেড়েছে লক্ষণীয় মাত্রায়। মুসলমান মনে করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যে শিখদেরকেও গালাগালি করা হচ্ছে অনেক সময়। শিক্ষা ও বিভিন্ন পেশার চাকরি বা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও মুসলমানরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে পাশ্চাত্যে। #

পার্সটুডে