আমি তুমার লাগি দোয়া করবাম মায়া,আল্লাহ যাতে তুমারে জানে-মালে ভালা রাহে”

আল নোমান শান্ত

“আমি তুমার লাগি দোয়া করবাম মায়া,আল্লাহ যাতে তুমারে জানে-মালে হগলবায় ভালা রাহে” এইভাবেই কান্না বিজড়িত কন্ঠে কথা গুলো বলছিলেন অসহায় বৃদ্ধা মোছাঃ হালিশজান বেগম (৭০)।
নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের মেলাডহর গ্রামের বাসিন্দা হালিশজান বেগমের মানবেতর জীবনযাপন ও অসহায়ত্তের কথা শুনে বিনামূল্য চিকিৎসা ও নিজ টাকায় ঔষধ কিনে দেওয়াসহ সকল চিকিৎসা ভার নেন দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাকসুদা আক্তার রিমি। তাই এই খুশিতে টল টল চোখের পানি মাখা মুখে চিকিৎসক রিমির মাথায় হাত রেখে উপরের কথা গুলো বলছিলেন হালিশজান বেগম।
গতকাল বুধবার সন্ধায় ডাঃ মাকসুদা আক্তার রিমির ব্যক্তিগত চেম্বারে এ দৃশ্য চোখে পড়ে। জানতে চাইলে হালিশজান বেগম বলেন, দীর্ঘ সময় যাবত ধরে বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন তিনি। তবে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই। তাই কষ্ট করেই বেঁচে থাকতে হচ্ছে। তবে এবার এলাকাবাসীর সাহায্যে ডাঃ রিমির কাছে চিকিৎসা নিতে আসলে কষ্টে জীবনযাপনের কথা শুনে সব চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন ডাঃ রিমি।
হালিশজান বেগম জানান,স্বামী মারা গেছেন প্রায় ৪০ বছর আগে। দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান নিয়ে ছিল তার ছোট্ট সংসার। প্রায় ১০ বছর আগে প্রতিপক্ষের হাতে মারা যায় বড় ছেলে। ছোট ছেলে হয়ে পড়ে অসুস্থ। এরপর থেকেই জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। আপনজন বলতে কেউ নেই। বলতে গেলে আছে শুধু এলাকাবাসী। বর্তমানে অন্যের বাড়িতে থাকেন। আশপাশের মানুষের দেওয়া খাবারেই কোনোরকম বেঁচে আছেন। তবে এখন বয়সের সঙ্গে শরীরেও বাসা বেঁধেছে বিভিন্ন রোগ। যেখানে তিনবেলা খাবার মেলেনা সেখানে চিকিৎসা পাওয়া ছিল শুধুই স্বপ্ন।
অসহায় ও হতদরিদ্র রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে ভিজিট কম রাখেন কখনও আবার একেবারেই রাখেন না এমন চিকিৎসকও আছেন। যাদেরকে বলা হয় মানবিক ডাক্তার। অনেকে তাদের গরিবের ডাক্তারও বলে থাকেন। এমনই একজন এক প্রচারবিমুখ গরিবের ডাক্তার নেত্রকোনার দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মাকসুদা আক্তার রিমি। তার ব্যক্তিগত চেম্বারে সামর্থ্যবানদের জন্য ৩০০ টাকা ভিজিট নির্ধারণ করা আছে। যদিও তার এখানে বেশির ভাগ রোগীই নিম্ন আয়ের। তাই ওই ফি কেবল সামর্থ্যবানদের জন্যই নির্ধারণ। প্রতিদিন আসা সামর্থ্যবান রোগীদের থেকে ভিজিট নিলেও প্রায়ই হতদরিদ্র রোগীদের ভিজিট ছাড়াই চিকিৎসা দিয়ে থাকেন রিমি। এমনকি অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষদের জন্য প্রতি বৃহস্পতিবারে বিনা পারিশ্রমিকে বিনামূল্যে ফ্রি চিকিৎসা দিয়ে থাকেন তিনি।
ডাঃ মাকসুদা আক্তার রিমি বলেন,হালিশজান বেগম আমার কাছে চিকিৎসা নিতে আসলে ওনার অসহায় জীবনযাপনে কথাগুলো শুনে আমার কাছে মনে হয়েছে ওনি খুবই কষ্টে আছেন। আপনজন বলতে কেউ নেই। তাই আমি ওনার সব ঔষধ কেনাসহ সকল চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন,আমি দুর্গাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আমার অফিস টাইম শেষ করে যতটুকু সময় পাই আমার চেম্বারে রোগী দেখে থাকি। আর এর মাঝে সপ্তাহের প্রত্যেক বৃহস্পতিবার আমি ভিজিট ছাড়াই রোগী দেখি।
ডাঃ মাকসুদা আক্তার রিমি ২০১৮ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ৩৯ তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের ৮ তারিখে সুনামগঞ্জ জেলার হাসান ফাতেমাপুর ইউনিয়ন সাব সেন্টারে মেডিকেল অফিসার হিসেবে প্রথম যোগদান করেন। সেখানে সাফল্যের সঙ্গে চিকিৎসাসেবা দিয়ে পরবর্তীতে ২০২২ সালের মে মাসের ২৮ তারিখে দুর্গাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন।
ডাঃ রিমি মনে করেন,অর্থ উপার্জন করাই সফলতা নয়, বরং একজন অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করে তুলতে পারলেই আসল সার্থকতা।




২১ বছর সমুদ্রসীমার অধিকার নিয়ে কেউ কথা বলেনি : প্রধানমন্ত্রী

ডিএনবি নিউজ ডেস্ক:

২১ বছর সমুদ্রসীমার অধিকার নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের যে বিশাল সমুদ্রসীমা রয়েছে, সেখানে আমাদের কোনো অধিকার ছিল না। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যা করে সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা ক্ষমতায় এসেছিল, ২১টা বছর তারা সমুদ্রসীমার অধিকার নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেনি।’

বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোন অ্যাক্ট-১৯৭৪’র সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের পররাষ্ট্রনীতি মেনে চলার পাশাপাশি নিশ্চিত হয়েছে সমুদ্রসীমা। সুনীল অর্থনীতি বাস্তবায়নে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১২ সালে ভারত, মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই সমুদ্রে বিশাল সমুদ্র সীমা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। যা দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে। ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর শান্তিপূর্ণ বাণিজ্য পথ হিসেবেই যেনো অব্যাহত থাকে। পররাষ্ট্রনীতি মেনেই সমুদ্র সম্পদ আহরণে সচেষ্ট থাকবো।’

তিনি বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস উত্তোলনের জন্য ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তেল, গ্যাস উত্তোলনে বিনিয়োগ করতে পারেন। আমরা চাই তেল, গ্যাসের সঠিক ব্যবহার। বিশাল সমুদ্রসীমার সম্পদ ব্যবহার করে দেশের মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতি করাই সরকারের লক্ষ্য।’

প্রত্যেকটা বিভাগে মেরিন একাডেমি করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার উন্নয়নে নানা ধরণের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ব্লু ইকোনমি যাতে ব্যবহার করতে পারি সে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রস্তুত থাকতে হবে।’