ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলছে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশ

ডিএনবি নিউজ ডেস্ক:

মৎস্য ভবন মোড় থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে চারদিকের রাস্তায় সারি সারি বাস পার্কিং করা। বাস থেকে নেমে স্লোগান উঠছে ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার।’ তারপর মিছিল নিয়ে বাসের লোকজন প্রবেশ করছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এছাড়া যারা ঢাকার আশপাশ থেকে পায়ে হেঁটে এসেছেন তারা সরাসরি মিছিল নিয়ে প্রবেশ করছেন উদ্যানে। মূলত এরা সবাই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কর্মী।

শুক্রবার (৩ নভেম্বর) সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মাঠে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সমাবেশের আয়োজন করেছে। সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির প্রবর্তন এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিলের দাবিতে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

উদ্যান ঘুরে দেখা গিয়েছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নেতারা মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছেন। আর সকাল থেকে যেসব কর্মী দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বা ঢাকা শহর থেকে এই সমাবেশ সফল করতে এসেছেন তারা মনোযোগ দিয়ে সেই বক্তব্য শুনছেন।

এছাড়া আরও দেখা গেছে, নেতাকর্মীরা বিভিন্ন গাছ তলায় শুয়ে বসে বিশ্রাম করছেন। অনেকে উদ্যানের উত্তর দক্ষিণ অংশে অর্থাৎ ছবির হাট টিএসসি গেট অংশের ঘোরাফেরা করছে। কেউ কেউ সেলফি তোলাও ব্যস্ত।

সমাবেশ সূত্রে জানা গেছে, জুমা নামাজের পর মূল সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। সেখানে বক্তব্য রাখবেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।

এর আগে গত ১ নভেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) তাদের ২০ শর্তে সমাবেশ করতে অনুমতি দেয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০ শর্ত যথাযথভাবে পালন সাপেক্ষে ৩ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হলো।




আজ জেলহত্যা দিবস

ডিএনবি নিউজ ডেস্ক:

আজ ৩ নভেম্বর। শোকাবহ কলঙ্কময় জেলহত্যা দিবস। মানবসভ্যতার ইতিহাসে বেদনাবিধুর একটি দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার পর ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। শহীদ চার নেতা হলেন- বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান। একাত্তরের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের শত্রুরা সেদিন জাতির সেরা সন্তান এ চার নেতাকে শুধু গুলি চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, কাপুরুষের মতো গুলিবিদ্ধ দেহকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে একাত্তরের পরাজয়ের জ্বালা মিটিয়েছিল।

ইতিহাসের এই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, স্তম্ভিত হয়েছিল সমগ্র বিশ্ব। কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় বর্বরোচিত এ ধরনের হত্যাকান্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার ঘৃণিত বিশ্বাসঘাতক হিসেবে পরিচিত এবং তৎকালীন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদের প্ররোচনায় একশ্রেণির উচ্চাভিলাষী মধ্যমসারির জুনিয়র সেনা কর্মকর্তা এ নির্মম হত্যাকান্ড ঘটায়। জাতীয় এ চার নেতা ১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সামরিক জান্তার হাতে আটক বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্ব দান করেন। বঙ্গবন্ধুর আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার পর পরই পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। পরে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় কোটি কোটি বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

বঙ্গবন্ধুর অন্য ঘনিষ্ঠ সহযোগী এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে নীতি ও কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তৎকালীন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমদ এবং জাতির পিতার দুই খুনি কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান এবং লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশীদ জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যার এ পরিকল্পনা করে। জাতি আজ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী ও চার জাতীয় নেতাকে যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশের ইতিহাসের অন্যতম বর্বরোচিত এ কালো অধ্যায়টি স্মরণ করবে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের উদ্যোগে সারা দেশে পালিত হবে শোকাবহ এ দিনটি। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তাঁরা শহীদ জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
এ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে- আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সর্বত্র শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, কালো ব্যাজ ধারণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জমায়েত এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে শহীদ জাতীয় নেতাদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। একইভাবে রাজশাহীতে জাতীয় নেতা শহীদ কামারুজ্জামানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। বিকাল ৩টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করবেন।

এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া ধানমন্ডি ৩২ প্রাঙ্গণে ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ফাউন্ডেশনের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনী হবে। ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর নাতি শেহেরিন সেলিম রিপন জানান, আজ প্রদর্শনীটির উদ্বোধন হবে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থেকে ৫ নভেম্বর অবধি চলবে।