হিজরি বর্ষের অষ্টম মাস হলো ‘শাবান’। এটি বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলতপূর্ণ মাস। হিজরতের প্রায় দেড় বছর পর এ মাসেই কিবলা পরিবর্তন হয়; অর্থাৎ পূর্ব কিবলা বায়তুল মুকাদ্দাসের পরিবর্তে কাবা শরিফ কিবলা হিসেবে নির্ধারিত হয়। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৪৪)
কোরআনের ঘোষণায় রজব হল সম্মানিত চার মাসের একটি। তাই সচেতন মুমিনেরা এর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। জাহেলিয়াতের যুগেও পুরো বছরের মধ্যে তারা রজব মাসকে অধিক গুরুত্ব দিত। অন্যদিকে মুসলিম সমাজ রমযান মাসকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। কিন্তু দুইয়ের মধ্যখানে শাবান মাস সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই গাফেল থাকে। অনেকের ভাবনা, রমযান হল ইবাদত ও রোজার মাস। কাজেই শাবান মাসে খাওয়া-দাওয়া করে শরীরে শক্তি যোগানো দরকার।
ইসলাম এ চিন্তাধারাকে অগ্ৰাহ্য করে শাবান মাসকে নফল রোজা পালনের সেরা সময় বলে ধার্য করলো। নবীজি এ মাসেই সবচেয়ে বেশি নফল রোজা রাখতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি নবীজিকে রমযান ছাড়া পুরো মাস রোজা রাখতে আর কখনো দেখিনি। আর শাবান ছাড়া অধিক (নফল) রোজা রাখতে আর কোন মাসে দেখিনি। -সহিহ বুখারি ও মুসলিম
তাই রমযানের ফরজ রোজা পালনে যাতে কোন ত্রূটি না হয় এজন্য রমযানের প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতির মাস হল শাবান। অতএব রমযান হলো ফরজ রোজার মাস এবং শাবান হলো তার প্র্যাকটিস করার মাস।
হযরত উসামা বিন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু নবীজিকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, শাবান মাসে আপনাকে যত রোজা রাখতে দেখি, অন্য মাসে এতো পরিমাণ রোজা রাখতে দেখিনি। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এটি রজব এবং রমযানের মধ্যবর্তী একটি (গুরুত্বপূর্ণ) মাস, অধিকাংশ মানুষ তা সম্পর্কে উদাসীন থাকে। এটি এমন একটি মাস, যে মাসে আল্লাহর সামনে (বান্দাদের) আমলগুলো পেশ করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি রোযাদার অবস্থায় আমার আমল আল্লাহর কাছে উঠানো হোক ।-সুনানে নাসাই,২:২০৪
লক্ষণীয় হল, মুমিন বান্দার আমলের বার্ষিক রিপোর্টিং হয়ে থাকে শাবান মাসে। সুতরাং ভালো রিপোর্টের জন্য নফল রোজায় ব্যস্ত থাকতে নবীজিও পছন্দ করতেন।
উল্লেখ্য যে, ৩ পদ্ধতিতে মুমিন বান্দাদের আমলের রিপোর্টিং হয়ে থাকে অর্থাৎ ফেরেশতারা আল্লাহর সামনে বান্দাদের আমল দৈনিক, সাপ্তাহিক ও বার্ষিক তিনভাবে পেশ করে থাকেন।
হযরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর কাছে দিনের আগেই রাতের আমল এবং রাতের আগেই দিনের আমল পেশ করা হয়। (সহিহ মুসলিম-১/৩১৯)
হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আমলগুলো দিনের শেষে পেশ করা হয়। সুতরাং এ সময় কেউ ভাল কাজে লিপ্ত থাকলে তার রিজিক ও আমলে বরকত দান করা হয়।-ফাতহুল বারি, ২:৩৩০)
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেছেন, প্রতি সোমবার এবং বৃহস্পতিবার আমলগুলো পেশ করা হয়। তাই আমি পছন্দ করি যে, রোজাদার অবস্থায় আমার আমল পেশ করা হোক।-জামিউত তিরমিযি, সুনানে ইবনে মাজাহ
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আল্লাহর সামনে আমলগুলো বিস্তারিত ও সংক্ষেপে দুরকমই পেশ করা হয়।রাতের আগেই দিনের আমল এবং দিনের আগেই রাতের আমল ও সোমবারেও বৃহস্পতিবারে দৈনিক ও সাপ্তাহিক বিস্তারিত পেশ করা হয়।-মাজমুউল ফাতাওয়া ৪:২৫২
আর পুরো বছরের আমল সমষ্টিগতভাবে শাবান মাসে পেশ করা হয়।
লেখক- প্রধান শিক্ষিকা, মানারাতুল উলুম মহিলা মাদরাসা, সিলেট।